আওয়ামী মুসলিম লীগ গড়ে তোলা হয় কেন

হ্যালো বন্ধুরা কেমন আছেন সবাই আশা করি সবাই অনেক ভাল আছেন। তো আজকে আমরা আওয়ামী লীগ মুসলিম লীগ কিভাবে গঠিত হলো! কেন আওয়ামী মুসলিম লিগ প্রতিষ্ঠা করা হলো কত সালে? কেন আওয়ামী মুসলিম লীগ গড়ে তোলা হয়েছিল? এসব বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি। তো চলুন দেরী না করে শুরু করা যাক।

 

আওয়ামী মুসলিম লীগে

 

বাংলাদেশ এর একজন নাগরিক হিসাবে আমাদের সবারই কম বেশি যেই রাজনৈতিক দলটি আমাদের কে স্বাধীন করেছে তাদের সম্পর্কে জানা খুবই প্রয়োজন। তাদের এই অবদান চিরকাল স্বর্ণাক্ষরে বাংলাদেশের ইতিহাসের পাতায় পাতায় লেখা থাকবে।

কেননা তাদের কারণেই মূলত আমরা বাংলাদেশের মত স্বাধীন ভূখণ্ড একটি স্বাধীন রাষ্ট্র পেয়েছি। যে কারণে তারা আমাদের কাছে কখনোই ভোলার নয় এবং ভোলার ও ছিল না। যখন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ মানুষের যে অধিকার ছিল তাদের কে সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়।

তাদের যে স্বাধীন ভাবে চলাফেরা করা প্রয়োজন ছিল তাদের কাছে থেকে সেই স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হয়। যাদের মায়ের ভাষা ছিল বাংলা তাদের মুখের ভাষাটাও পর্যন্ত কেড়ে নেয়া হয়। আর যেসব মানুষেরা আমাদের তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন জন সাধারন মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য তাদেরকে সাহায্য করেছে।

তাদের সাথে মিলে তাদের হয়ে অধিকার আদায়ের জন্য যারা আন্দোলন করেছে তাদের আমরা কখনোই ভুলতে পারবো না। তাদের কে আমরা অবশ্যই শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি কিন্তু। আমাদের মধ্যে অনেকেই রয়েছে যারা আমাদের যেই রাজনৈতিক দল এর মাধ্যমে এই দেশটি স্বাধীন হয়েছিলো তাদের ইতিহাস সম্পর্কে খুব একটা জানি না।

বর্তমান সময়ের তরুণ প্রজন্মের বেশিরভাগই ভাবে যে আওয়ামী লীগ মানে শুধু মাত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু আসল কথা তারা জানে না যে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা করেছিল কেনই বা আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। দেশের মানুষের জন্য তারা কি কি উপকার করেছিলো। তাদের মত মানুষের জন্য আওয়ামী লীগ ছিলো।

বর্তমান প্রজন্মের অনেনেই আমরা এই সব নিয়ে তেমন একটা ঘাটাঘাটি করতে চাই না। কিন্তু একজন স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের সবার কর্তব্য আছে আমাদের পেছনের ইতিহাস জানা প্রয়োজন আছে। যারা না থাকলে হয়ত আমরা আজ ও পরাধীন থাকতাম।

আজকে আমি আপনার সাথে আলোচনা করব বাংলাদেশের প্রথম যে রাজনৈতিক দলটির উত্থান সম্পর্কে। যাদের মাধ্যমে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। সেই রাজনৈতিক দলটি প্রতিষ্ঠাতা কে কে ছিল এবং কারা এই আওয়ামী মুসলিম লীগ কে প্রতিষ্ঠা করেছিল এসব সম্পর্কে জানব।

আপনাদের আরো জানানোর চেষ্টা করব যে কিভাবে এই বঙ্গ দেশের একমাত্র রাজনৈতিক দল হিসেবে জনপ্রিয়তায় শীর্ষে ছিল আওয়ামী মুসলিম লীগ।

সেইসাথে শুধুমাত্র মুসলিমদের জন্য ই নয় হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সহ সবার কাছে আওয়ামী লীগ জনপ্রিয়তায় শীর্ষে ছিলো। যে রাজনৈতিক দলটি অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে আত্মপ্রকাশ করেছিল, তার ইতিহাস সম্পর্কে চলুন জেনে নেওয়া যাক।

 

আওয়ামী মুসলিম লীগ গড়ে তোলা হয় কেন

সময়টা ছিল ১৯৪৯ সালের ২৩শে জুনের কোন একটি সময়। তখন পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতারা ছিল প্রচুর উদারপন্থী। তখন পশ্চিম পাকিস্তানের বিভিন্ন রাজনৈতিক কারনে পূর্ব পাকিস্তানের এই সব রাজনৈতিক নেতারা নিজেদের কে খুব অবহেলিত মনে করতে ছিল।

তৎকালীন সময়ের পূর্ব পাকিস্তানের সব রাজনৈতিক নেতারা মিলে মোগলটুলি ১৫০ নম্বর বাড়িতে কর্মী শিবির স্থাপন করে। যেখান থেকে তারা চিন্তা করল যে নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠন করার জন্য। তখন তাদের সাথে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কলকাতা থেকে এসে যুক্ত হয়।

আর ওইদিকে টাঙ্গাইলের প্রিন্সিপাল ইব্রাহিম খাঁ পদত্যাগ করে। তার পদত্যাগ করার কারণে উপনির্বাচনে দুই দফায় মুসলিম লীগ থেকে জিতে যায় মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী এবং শামসুল হক। কিন্তু তৎকালীন সরকার তাদের দুজনেরই নির্বাচনী ফলাফল অবৈধ ঘোষণা করে এতে তারা খুবই ক্ষুব্ধ হন।

পরবর্তী সময়ে তারাও এই কর্মীদের সঙ্গে মিলে নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠন করার কথা ভাবতে শুরু করে। এর কিছুদিন পর মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী সাধারণ সম্পাদক ইয়ার মোহাম্মদ খান একটি সভায় ডাকে। তখন তারা ১৯৪৯ সালে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম লীগ নামক একটি দল গঠন করে।

আর এই সময়ে পূর্বাঞ্চলের এই প্রদেশের রাজনৈতিক দলটি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, যুবক নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শামসুল হক সহ আরও কয়েকজন রাজনৈতিক নেতারা পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠন করে। এভাবেই মূলত আওয়ামী মুসলিম লীগ দলটির যাত্রা শুরু হয়।

আর এরা ছিলো পূর্ব পাকিস্তানের একমাত্র রাজনৈতিক দল যাদের উদারপন্থী চিন্তা ভাবনা ছিল। এ কারণে তারা খুব দ্রুতই পূর্ব পাকিস্তানে জনপ্রিয়তা অর্জন করতে সক্ষম হয়। তখন তাদের একমাত্র প্রতিপক্ষ ছিল জামায়াতে ইসলামী। যাদের কারণে তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হত।

পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠনের পরপরই সারা বঙ্গ প্রদেশে জনপ্রিয়তা অর্জন করে। তা তৎকালীন সরকারের কাছে খুব রহস্যজনক মনে হয়। তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে তাদেরকে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। কেননা তারা কখনই চাইতো না যে পূর্ব পাকিস্তানের কেউ ক্ষমতায় থাকুক।

 

কবে আওয়ামী মুসলিম লীগ গড়ে তোলা হয়?

সময়টা ছিল ১৯৪৯ সালের ২৩শে জুন মাসের বিকেল বেলা। তখন ঢাকার কে এম দাস লেন এর রোজ গার্ডেনে একটি রাজনৈতিক দল আলোচনা করতে বসে। আর এই রোজ গার্ডেন এর মালিক ছিলেন কাজী হুমায়ুন রশীদ।

কাজী হুমায়ুন রশীদ তার এই রোজ গার্ডেনে একটি সভা করার জন্য সব রাজনৈতিক নেতাদের আহ্বান জানান।

তার আহবানে সাড়া দিয়ে প্রায় ২০০ থেকে ২০০ জনের মত লোক তার রোজ গার্ডেনে উপস্থিত হয় নতুন একটি রাজনৈতিক সংগঠন তৈরি করার জন্য।

তখন মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী একটি প্রস্তাব করেন একটি রাজনৈতিক দল তৈরি করার জন্য। সেই সাথে তিনি রাজনৈতিক দলটির নাম দেয় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ। কিন্তু এটা ছিল পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ শুধুমাত্র পূর্ব পাকিস্তানের জন্য।

এরপরে তাদের প্রয়োজন পড়ে পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য আরো একটি দল গঠন করার পরে সেই দলটির নতুন নাম দেওয়া হয় “নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ”।

পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ ছিলো পূর্ব পাকিস্তানের জন্যে এবং পশ্চিম পাকিস্তানে এই রাজনৈতিক দলের একটি শাখা ছিল নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে।

যদিও পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সভাপতি ছিলেন মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী। কিন্তু নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সভাপতি হয়ে যান হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী।

নতুন এই আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠনের পর, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীকে নবগঠিত রাজনৈতিক দলের জন্য একটি কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়। দায়িত্ব পাওয়ার পর মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী অন্যান্যদের সাথে পরামর্শ করে নবগঠিত রাজনৈতিক দলের জন্য একটি নতুন কমিটি ঘোষণা করে।

এরপর মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের নতুন কমিটি ঘোষণা করেন। সেই কমিটিতে মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী নিজেকে সভাপতি ঘোষণা করেন। সেই সাথে সহ-সভাপতি ঘোষণা করা হয় আতাউর রহমান খান, আব্দুস সালাম, আলী আমজাদ খান, আবদুস সালাম খান ও সাখাওয়াত হোসেন।

আর নবগঠিত নতুন রাজনৈতিক দলের কমিটির সাধারণ সাধারণ সম্পাদক শামসুল হককে নির্বাচিত করা হয়। আর রোজ গার্ডেন এর মালিক কে ট্রেজারার নির্বাচিত করা হয় যিনি এই সভার প্রথম আয়োজন করে।

তৎকালীন সময়ে শেখ মুজিবুর রহমান কারাগারে আটক ছিল। তাই তাকে নবগঠিত রাজনৈতিক দলের কমিটিতে যুগ্মসাধারণ সম্পাদক করা হয়। সেই সভায় শেরে বাংলা একে ফজলুল হক কিছুক্ষণ সময়ের জন্য অবস্থান করে ছিল। কেননা তিনি ছিলেন তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের এডভোকেট জেনারেল পদে বর্তমানে যেটাকে অ্যাটর্নি জেনারেল পদ বলা হয়।

তাই শেরে বাংলা একে ফজলুল হক সরকারি পদে থাকার কারণে কিছুক্ষণ পর সেই সভা থেকেই চলে আসে। এভাবে মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী প্রায় ৪০ জনের একটি কমিটি গঠন করে। তবে পরবর্তী সময়ে তাদের এই কমিটির অনেকেই আওয়ামী মুসলিম লীগের সঙ্গে আর থাকেনি।

 

আওয়ামী লীগ এর নাম পরিবর্তন

তৎকালীন সময় হিন্দু এবং মুসলিম আসনগুলোতে আলাদা আলাদা ভাবে নির্বাচন করা হতো। যে কারনে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দেওয়ার জন্য অনেকে আপত্তি করে। তৎকালীন সময়ে মুসলিম শব্দটি বাদ দেওয়ার জন্য মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী প্রচুর চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে।

কিন্তু হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মুসলিম শব্দটি বাদ দিতে চাননি। কারণ তিনি ভেবেছিলেন মুসলিম শব্দটি বাদ দিলে পশ্চিম পাকিস্তানের নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ দলটির জনপ্রিয়তা কমে যেতে পারে। যদিও এই পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠনের সময়ে এই দল কে অসাম্প্রদায়িক দল হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছিলো।

যাই হোক পরবর্তী সময়ে পূর্বপাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের নাম থেকে প্রথম মুসলিম নাম টি কেটে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে দলের নাম রাখা হয় আওয়ামী লীগ। মুসলিম নামটি বাদ দেওয়ার পরে অনেক অমুসলিম নেতারা ও আওয়ামী লীগ এ যোগ দিতে থাকে।

 

যেভাবে আওয়ামী লীগের ভাঙন শুরু হয়

সময়টা ছিল ১৯৫২ সাল হঠাৎ করে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক অসুস্থ হয়ে যায়।

যে কারণে তাঁর জায়গায় ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান শেখ মুজিবুর রহমান। এর ঠিক পরের বছরই পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয় শেখ মুজিবুর রহমানকে। আর শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনে অব্যাহত থাকে।

সবকিছুই ভালো হবে চলছিল কিন্তু ১৯৫৭ সালে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের মধ্যে ভাঙ্গন দেওয়া শুরু করে। কেননা তখন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ সরকার ক্ষমতায় ছিল। এই সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কিছু সামরিক চুক্তি করে। সেই সাথে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার সিয়াটো এবং সেন্টো সামরিক জোটের সদস্য হয়।

এ সদস্য হওয়াকে কেন্দ্র করে মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী এবং দলের ভিতরে থাকা আরও কয়েকজন বামপন্থী নেতারা এই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য সরকারকে চাপ দিতে থাকে।

কিন্তু তৎকালীন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী তাদের দাবি মেনে নিতে রাজি হননি। কিন্তু তারপরেও মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী টাঙ্গাইলের এক সভায় ভোটাভুটি করেন যে, পাকিস্তান ভারতের যুক্তরাষ্ট্রের জোট গুলোতে থাকবে কি থাকবে না!

কিন্তু এই ভোটে মাওলানা ভাসানী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কাছে হেরে যায়। এর পরেই ১৮ই মার্চ মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সভাপতির দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করে। এই সময় থেকে মূলত আওয়ামী মুসলিম লীগের ভাঙ্গন শুরু হয়।

তার কয়েক মাস পরে মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ঢাকা রূপ মহল সিনেমা হলে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি গঠন করে যার সংক্ষিপ্ত নাম ছিল ন্যাপ। এর পরে আস্তে আস্তে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতারা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নতুন এই আওয়ামী ন্যাশনাল পার্টি তে যোগ দিতে থাকে।

এদের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য ছিল আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ইয়ার মোহাম্মদ খান। যিনি পরবর্তীতে মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ন্যাপে অংশগ্রহণ করে। এই যখন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের অবস্থা হয় তখন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগীশ কে দায়িত্ব দেয়া হয়।

আর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তখন ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কে রাখা হয়। এরপর ১৯৬৬ সালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মারা গেলে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ আবার নতুন পুনর্গঠন করে কমিটি গঠন করা হয়।

ঠিক তখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগের সভাপতি হওয়ার জন্য তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া কে অনুরোধ করে। কিন্তু তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া এতে রাজী না হয়ে তিনি বলেন আমি লেখালেখি নিয়েই থাকতে চাই।

এরপরে জাস্টিস মোহাম্মদ ইব্রাহিম নামের একজন সাবেক মন্ত্রীকে অনুরোধ করা হয়েছিল পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতি হওয়ার জন্য তিনি ও কেন্দ্রীয় সভাপতির দায়িত্ব নিতে রাজি হয় না।

এ যখন দলের অবস্থা তখন ১৯৬৬ সালের আওয়ামীলীগের কাউন্সিলর সভায় আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচন করা হয় মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগীশ কে। তবে দুঃখের বিষয় এই যে ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফা কর্মসূচি ঘোষণা করে।

আর এই কর্মসূচি ঘোষণার করার কারণে মাওলানা তর্কবাগীশ সহ আওয়ামী লীগের আরো অনেক সদস্য এর বিরোধিতা করে। সেই সাথে তারা আওয়ামী লীগ থেকে থেকে বের হয়ে যায়।

ঠিক সেই বছরই আবারও আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর মিটিংয়ে শেখ মুজিবুর রহমান নিজে সভাপতি নির্বাচিত হয়। আর সেই সাথে তাজউদ্দীন আহমদ কে শেখ মুজিবুর রহমান এর আগের পদ সাধারণ সম্পাদক করা হয়। আর এদের হাত ধরেই আওয়ামী লীগ দেশ কে স্বাধীন ঘোষণা করে।

আওয়ামী মুসলিম লীগের অবদান

একটি স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের সবারই কম বেশি বাংলাদেশের ইতিহাস সম্পর্কে জানা অতি প্রয়োজন বা উচিত।

কেননা যাদের মাধ্যমে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি, যাদের কারণে আমাদের এই স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যাদের কল্যাণে আজকে আমরা একটি স্বাধীন ভূখণ্ড পেয়েছি তাদেরকে আমরা কখনোই ভুলতে পারবো না।

তারা না থাকলে হয়তো আমরা আজও পরাধীন থাকতাম। যেমন ব্রিটিশদের কাছে প্রায় ২০০ বছর পরাধীন ছিলাম এখনো হয়তো আমরা ঠিক তেমনি পরাধীন থাকতাম। তাদের এই কৃতিত্ব কখনোই ভোলার নয় যাদের দুরদর্শী চিন্তা চেতনার কারণেই আমরা একটি স্বাধীন ভূখণ্ড পেয়েছি।

আর এই আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ার পেছনে যে রাজনৈতিক দলটি ছিল সেই রাজনৈতিক দল হলো আওয়ামী লীগ (আগে আওয়ামী মুসলিম লীগের)। আওয়ামী লীগ নামক রাজনৈতিক দল না থাকলে হয়তো আমরা স্বাধীনতার এত কাছাকাছি পৌঁছাতে পারতাম না।

তাদের কারণেই মূলত আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, তাদের কারণেই মূলত একটি বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে সেই দেশের আদর্শ একজন নাগরিক হয়েছি। আর এই আওয়ামী মুসলিম লীগ নামক রাজনৈতিক দলটির অবদান কখনোই ভোলার নয়। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততই তাদের ইতিহাস বীরগাথায় গেঁথে রবে।

শেষকথা

এখন হয়তো আপনারা জানতে পেয়েছেন যে আওয়ামী মুসলিম লীগ কবে গঠিত হয়েছে। এছাড়াও আমরা আপনাদের আরো জানানোর চেষ্টা করেছি আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হওয়ার মূল কারণ কি ছিল এবং কে বা কারা মুসলিম লীগ তৈরি করেছিল।

এখন হয়তো আপনি জানতে পেরেছেন যে আওয়ামী মুসলিম লীগ কবে গঠিত হয়েছে এবং বা কারা কারা আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠনের মূল কেন্দ্র ছিল। তো আজকের মত এ পর্যন্তই ছিল আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত এ বিষয়টি নিয়ে।

দেখা হবে আবার নতুন কোন আর্টিকেলে নতুন কোন বিষয় নিয়ে। এছাড়া আপনার কোন বন্ধু বান্ধব যদি আওয়ামী লীগ কবে গঠিত হয়েছে এই সম্পর্কে না জানে। তাহলে তার সাথে আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হয়েছে আমাদের এই আর্টিকেলটি শেয়ার করে জানিয়ে দিতে পারেন।

এতে করে আপনার বন্ধু আওয়ামী মুসলিম লীগ কবে গঠিত হয়েছে সম্পর্কে ভালো ধারণা পেয়ে যাবে। এছাড়াও সে আরো জানতে পারবে আওয়ামী লীগ গঠনে কারা কারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। নতুন কোন বিষয় সম্পর্কে যদি জানতে চান তাহলে উক্ত বিষয়টি কমেন্ট করে লিখে আমাদের জানাতে পারেন।

আমরা খুব শীঘ্রই আপনার বিষয়টি নিয়ে নতুন আর্টিকেল প্রকাশ করার চেষ্টা করব। তো দেখা হবে আবার নতুন কোন আর্টিকেলে নতুন কোন বিষয় নিয়ে যতক্ষণ পর্যন্ত আশা করি সবাই ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন। খোদা হাফেজ।

Updated: April 1, 2022 — 8:17 pm