শিশুদের জ্বর কেন হয়? বাচ্চার জ্বর কমানোর উপায় গুলো কি কি

আপনার ছোট্ট সোনামণি কি জ্বরে ভুগছে?আপনি কি বাচ্চার জ্বর কমানোর উপায় খুঁজছেন? তাহলে আপনার জানতে হবে শিশুদের জ্বর কেন হয়? ও  দ্রুত বাচ্চার জ্বর কমানোর উপায় গুলো কি?

আপনার নবজাতক শিশু কিংবা আপনার বাচ্চার জ্বর নিঃসন্দেহে আপনার জন্য চিন্তার বিষয়। আর  মা-বাবার জন্য সন্তানে শারিরীক অসুস্থতা একদম বিভীষিকার মত। শিশুরদের জ্বর হওয়ার কারণ, লক্ষণ ও ধরণ অনেক রকমের হয়। কখনও বয়সের জন্য।  কখনও বা শারিরীক অবস্থা বা শিশুর যত্নের ত্রুটির কারণেও হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে শিশুদের জ্বর সাধারণ ধরা হয়। কখনও আবার  একটি নবজাতক শিশুর জন্য বিপজ্জনক সংক্রমণের লক্ষণ হতে পারে।

এই কারণে আপনার শিশুর বয়স যেটিই হোক না কেন জ্বর হলে অবহেলা তো করা যাবেই না। বরং দরকার হবে সঠিক চিকিৎসা।  তাই সবার আগে খুঁজে বের করতে হবে শিশুদের জ্বর কেন হয়?  আর আপনার বাচ্চার জ্বর কমানোর উপায় গুলো।

জ্বর কি? 

জ্বর হল আপনার শরীরের তাপমাত্রার সাময়িক বৃদ্ধি।  প্রায়ই বিভিন্ন  অসুস্থতার কারণে আমাদের জ্বর হয়ে থাকে।  জ্বর হওয়ার একটি লক্ষণ যে আপনার শরীরে স্বাভাবিকের বাইরে কিছু  ঘটেছে।  একজন প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য, জ্বর অস্বস্তিকর হতে পারে।  তবে সাধারণত এটি উদ্বেগের কারণ নয়।  যদি না এটি 103 F (39.4 C) বা তার বেশি হয়। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে ব্যপারটা ভিন্ন।  

 আামদের শরীরে গড় স্বাভাবিক  তাপমাত্রা সাধারণত 98.6°F (37°C)  হয়। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে “স্বাভাবিক” শরীরের তাপমাত্রা 97°F (36.1°C) থেকে 99°F (37.2°C) পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। প্রায়শই 100.4°F (38°C) এর বেশি তাপমাত্রা মানে সংক্রমণ বা অসুস্থতা। যার কারণে  আপনার জ্বর হয়।

শিশুদের জ্বর কেন হয় 

একটি শিশুর জ্বর হওয়ার অনেক কারন থাকতে পারে। আর শিশুর বয়স ও জ্বরের কারণ ভেদে ট্রিটমেন্ট করাতে হয়। বয়স ভেদে শিশুর জ্বর হওয়ার কারণ গুলো জেনে নিন- 

নবজাত শিশুর জ্বর

শিশুদের মধ্যে জ্বর সাধারণ।  কিন্তু একটি নবজাতক শিশুর জন্য নয়। তাদের জন্য  জ্বর  বিপজ্জনক সংক্রমণের লক্ষণ হতে পারে। এই কারণেই 2 মাসের কম বয়সী শিশুদের 100.4 বা তার বেশি জ্বরের ক্ষেত্রে জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া উচিত। শিশুদের বেশিরভাগ জ্বর ভাইরাসের কারণে হয়।

যদি আপনার নবজাত  শিশুর জ্বর থাকে।  তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এর মানে হল যে তারা সম্ভবত সর্দি বা অন্য ভাইরাল সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছে। যদিও এগুলি শিশুদের মধ্যে কম দেখা যায়। নিউমোনিয়া, মূত্রনালীর সংক্রমণ, কানের সংক্রমণ বা আরও গুরুতর সংক্রমণ যেমন রক্তের ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ বা মেনিনজাইটিস জ্বরের কারণও হতে পারে।

৬ মাস বয়সী শিশুর জ্বর 

যদি আপনার শিশুর বয়স ৬  মাসের কম হয়। তাহলে যেকোনো জ্বরের জন্য আপনার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সাথে যোগাযোগ করুন। যদি আপনার শিশুর বয়স  6 মাস হয় এবং তার তাপমাত্রা 102 ফারেনহাইট (38.9 সেন্টিগ্রেড) পর্যন্ত থাকে।  এবং অসুস্থ মনে হয় বা 102 ফারেনহাইট (38.9 সেন্টিগ্রেড) এর বেশি তাপমাত্রা থাকে।   তাহলে আপনার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সাথে যোগাযোগ করুন।

১-২ বছর বয়সী শিশুর জ্বর

১-২ বছরের শিশুদের জ্বর হতে পারে এমন কারণ হচ্ছে- 

  •  শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ (আরটিআই)
  • ফ্লু
  • কানের সংক্রমণ
  • roseola – একটি ভাইরাস যা তাপমাত্রা এবং ফুসকুড়ি সৃষ্টি করে
  • টনসিলাইটিস
  • কিডনি বা মূত্রনালীর সংক্রমণ (ইউটিআই)

৩ বছরের উর্ধে শিশুদের জ্বর

তিন বছেরর উর্ধে  বেশিরভাগ শিশুদের জ্বর সংক্রমণ বা অন্যান্য অসুস্থতার কারণে হয়। শরীরের উচ্চ তাপমাত্রা ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসের জন্য আরও কঠিন করে তোলে। 

  • সাধারণ শৈশব অসুস্থতা, যেমন চিকেনপক্স এবং হুপিং কাশি
  • আপনার সন্তানের তাপমাত্রাও টিকা দেওয়ার পরে বাড়তে পারে
  •  ভাইরাল সংক্রমণ,
  •  সাধারণ সর্দি,
  •  ফ্লু, 
  •  যেমন শ্বাসযন্ত্রের সিনসিটিয়াল ভাইরাস বা
  •  ভাইরাল ক্রুপ

বাচ্চার জ্বর কমানোর উপায় 

  •  কোল্ড কম্প্রেস 

বাচ্চার জ্বর কমানোর উপায় গুলোর মধ্যে খুবই কার্যকরী হল কোল্ড কমপ্রেস। এজন্য 

আপনার সন্তানের মাথায় একটি শীতল, ভেজা ধোয়ার কাপড় রাখুন।  এটি জ্বর থেকে মুক্তি দিতে পারে দেবে।  এবং আপনার শিশুকে বিশ্রামে সহায়তা করবে।  

  • কুসুম গরম পানিতে গোসল

আপনার শিশুটি যদি নবজাতক হয় তাহলে কুসুম গরম পানিতে গোসল খুবই কাজে দিবে। তবে গোসলের সাথে সাথে শিশুর শরীর ভাল করে মুছে ফেলতে হবে। এবং বাতাসের সংস্পর্শে শিশুকে রাখা যাবে না। এতে হিতে বিপরীত হতেও পারে। শিশুর আবার ঠান্ডা লাগতে পারে। 

  • বেশি বেশি তরল খাবার খাওয়ানো

শিশুর জ্বর হলে তাকে বেশি বেশি  তরল  খাবার খাওয়াতে হবে। এটি  ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ করতে সহায়তা করবে।  এবং শরীরকে ঠান্ডা করতে সাহায্য করবে। তাই এসময়ে  আপনার শিশুকে প্রচুর পরিমাণে তরল পান করুন।  যার মধ্যে রয়েছে জল, পরিষ্কার স্যুপ, পপসিকলস বা দই। 

  • শিশুর জ্বর কমাতে পেঁয়াজ

বাচ্চার জ্বর কমানোর উপায় গুলোর মধ্যে   সবচেয়ে ঐতিহ্যগত ঘরোয়া উপায় হল পেঁয়াজ।    পেঁয়াজ জ্বর কমানোর পাশাপাশি শরীরের ব্যথা উপশমে কার্যকর। 

  • পেঁয়াজের দুই বা তিনটি মোটা টুকরো কেটে ঘুমানোর আগে কয়েক মিনিট বাচ্চার পায়ে ঘষে নিন।
  •  দিনে দুবার প্রক্রিয়াটি পুনরাবৃত্তি করুন।   দেখবেন জ্বর স্বয়ংক্রিয়ভাবে কমে যাবে।
  • আদা জলে গোসল

অসুস্থ শিশুকে সতেজ স্নান করাতে পারেন।  এক বালতি গরম পানিতে প্রায় দুই টেবিল চামচ আদার গুঁড়া।  এবং কয়েক টুকরো কাঁচা আদা যোগ করুন। এই আদা স্নান কৌশলটি খুব দারুন কাজ করবে। 

  • সরিষার ও রসুনের তেলের মালিশ

সরিষার তেল এবং রসুন দুটোই জ্বর কমাতে কার্যকর। দুই টেবিল চামচ গরম সরিষার তেলে এক টেবিল চামচ রসুনের পেস্ট যোগ করুন।  এবং মিশ্রণটি ঠান্ডা হতে দিন। ঘুমানোর আগে মিশ্রণটি শিশুর পায়ে, তালুতে, বুকে এবং পিঠে লাগান এবং  আলতোভাবে ম্যাসাজ করুন।

  • জ্বর কমাবে ডিমের সাদা অংশ 

ডিমের সাদা অংশ

এর সান্দ্র বৈশিষ্ট্য শরীরের  তাপ শোষণ করতে পারে। শিশুর জ্বরের চিকিৎসার জন্য একই পদ্ধতি  ব্যবহার করা যেতে পারে। ডিমের সাদা অংশ থেকে কুসুম আলাদা করুন।  এবং এটি একটি মসৃণ গঠন না হওয়া পর্যন্ত ডিমটি বীট করুন। একটি ছোট ওয়াশক্লথ মিশ্রণে ডুবিয়ে শিশুর পায়ের চারপাশে আলতো করে মুড়ে এক ঘণ্টা রেখে দিন। বাচ্চার জ্বর কমানোর উপায় হিসেবে এটি খুব ভাল কাজ করবে।  

  • লেবুর রস ও মধু

লেবু এবং মধুর উপাদানের সংমিশ্রণ জ্বর কমাতে অত্যন্ত কার্যকরী। এক টেবিল চামচ মধু ও সমপরিমাণ লেবুর রস মিশিয়ে মিশ্রণটি শিশুকে খাওয়ালে জ্বর কমে যাবে। 

আরো কিছু সর্তকতা 
  • ডিহাইড্রেশন এড়াতে প্রচুর পরিমাণে তরল পান করান।
  • ডাক্তারের পরামর্শের ভিত্তিতে অ্যাসিটামিনোফেন বা আইবুপ্রোফেন দিন। অ্যাসপিরিন দেবেন না।
  • জ্বর কমাতে কখনই রাবিং অ্যালকোহল বা ঠান্ডা স্নান ব্যবহার করবেন না।
  • আপনার শিশুকে হালকা পোশাক পরুন।  এবং হালকা চাদর বা কম্বল দিয়ে ঢেকে দিন।
  • আপনার শিশুকে সে যা চায় তা খেতে দিন।  এবং আপনার সন্তান যদি তা পছন্দ না করে তবে জোর করে খেতে দেবেন না।
  • যদি আপনার সন্তানেরও বমি হয় এবং/অথবা ডায়রিয়া হয়।  তাহলে ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করুন।  
  • নিশ্চিত করুন যে আপনার শিশু যেন প্রচুর বিশ্রাম পায়।
কখন ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন? 
  • 3 মাসের কম বয়সী একটি শিশুর তাপমাত্রা 100.4°F (38°C) বা তার বেশি হলে 

একটি বড় শিশুর জ্বর ক্ষেত্রে :

  • শরীর দূর্বল হয়ে গেলে
  • শরীরে  ফুসকুড়ি দেখা দিলে
  • দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়া।  অথবা বারবার বমি হলে

একজন বাবা/ মা হিসেবে শিশুর শরীর নিয়ে  দুশ্চিন্তার শেষ নেই। তার মধ্যে যদি সন্তানের হুট করেই জ্বর দেখা দেয় তখন বাবা-মা সহজেই প্যানিক হয়ে যান। কিন্তু এসময়ে শিশুর দরকার অতিরিক্ত যত্ন ।  এবং সঠিক ট্রিটমেন্ট।  তাই  শিশুরদের জ্বর কেন হয় এটা সবার আগে জানা জরুরি।  এবং সে অনুযায়ী বাচ্চার জ্বর কমানোর উপায় গুলো তো ফলো করতেই হবে। ঘরোয়া ট্রিটমেন্ট ও সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে আপনার শিশুর সুস্বাস্থ্য কামনা করি।