ওয়াকিটকি কি? – ওয়াকিটকি কিভাবে কাজ করে?

আমরা অনেকেই বিভিন্ন হলিউড বলিউড মুভি তে বেশির ভাগ সময়ে সেনাবাহিনীদের এক পক্ষের সাথে অন্য পক্ষের মোবাইল ফোনের মত একটি যন্ত্রের সাহায্যে কথা বলতে দেখি। যেটাকে মূলত walkie-talkie বলা হয়ে থাকে। সেনাবাহিনীরা মূলত যুদ্ধ ক্ষেত্রে কোন ধরনের নেটওয়ার্ক শত্রুপক্ষের আড়িপাতা থেকে বাঁচতে তাদের বিভিন্ন কথাবার্তা চালিয়ে যাওয়ার জন্য walkie-talkie ব্যবহার করে থাকে।

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা জানতে পারব ওয়াকি টকি কি এবং এটি কি কিভাবে কাজ করে। সেই সাথে আমরা জানতে পারব walkie-talkie ও বাংলাদেশের আইন কানুন সম্পর্কে, walkie-talkie কিভাবে ক্রয় করা যায় এসব বিষয়গুলো নিয়ে। তো চলুন জেনে নেওয়া যাক walkie-talkie কিভাবে কাজ করে!

ওয়াকিটকি কী?

ওয়াকি টকি হলো তার ছাড়া কোন ধরনের নেটওয়ার্ক ছাড়া টু বাই টু কমিউনিকেশন যন্ত্র। যেটার সাহায্যে যেকোনো স্থানে কোন ধরনের নেটওয়ার্ক ছাড়াই এক পক্ষ অন্য পক্ষের সাথে কথা বলতে পারে।

ওয়াকি টকি সাধারণত রেডিও ফ্রিকোয়েন্সির মাধ্যমে বিভিন্ন তথ্য আদান প্রদান করে থাকে তবে অবশ্যই এক্ষেত্রে একটি নিয়োগ কাজ করে সেটা হল এক পক্ষ যখন ঘটে তাকে দিয়ে কথা বলে অন্যপক্ষ তখন কথা বলতে পারে না। আবার অন্য পক্ষ যখন কথা বলে তখন এই পক্ষ কথা বলতে পারে না।

ওয়াকি টকি দিয়ে কথা বলার নিয়ম হল এর পক্ষ কথা বলার পরে অন্যপক্ষ কে কথাটা পাঠাবে। এবং অন্যপক্ষ কথাটা গ্রহণ করে শুনে আবার তার কথা পাঠাবে। ওয়াকি টকি এমন একটি তথ্য আদান-প্রদান ও যোগাযোগ করার যন্ত্র যেটা যেকোনো পরিস্থিতিতে যে কোনো স্থানে কাজ করে।

ডোনাল্ড এলো হিংস আলফ্রেড জেলা গ্রোস ১৯৩৯ সালে টিম অফ মটোরোলা নামে একটি কোম্পানির সাথে যৌথ ভাবে walkie-talkie নামক একটি যন্ত্র আবিষ্কার করে। যেটার মাধ্যমে যেকোনো পরিস্থিতিতে যে কোনো নেটওয়ার্ক ছাড়াই কমিউনিকেশন করা সম্ভব হয়।

ওয়াকিটকি কিভাবে কাজ করে?

নির্দিষ্ট রেডিও ফ্রিকোয়েন্সির মাধ্যমে টু বাই টু নেটওয়ার্কে ওয়াকি টকি কাজ করে থাকে। আমানে আপনি যদি ওয়াকি টকির মাধ্যমে অন্য কারো সাথে কথা বলতে চান তাহলে অবশ্যই তার কাছে আরও একটি walkie-talkie থাকতে হবে।

ওয়াকি টকি মূলত একটি দ্বিমুখী কমিউনিকেশন ব্যবস্থার যন্ত্র বলা হয়। যার মানে হলো এক পক্ষ যখন কথা বলবে অন্যপক্ষ শুনবে আবার অন্য পক্ষ যখন কথা বলবে এক পক্ষ শুনবে। আর অবশ্যই এক পক্ষ থেকে অন্য পক্ষের দূরত্ব সর্বোচ্চ পাঁচ কিলোমিটার এর কম হতে হবে। যদি পাঁচ কিলোমিটারের বেশি হয় তাহলে ওয়াকি টকিতে রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি কাজ করবে না।

ওয়াকি টকি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়ে থাকে যুদ্ধবিধ্বস্ত বা যুদ্ধক্ষেত্রে। যেখানে শত্রুপক্ষের আড়িপাতা থেকে বাঁচার জন্য ওয়াকি টকির মাধ্যমে কথা বলা হয়ে থাকে। এছাড়াও বর্তমান সময়ে বিভিন্ন ধরনের আইন রক্ষাকারী বাহিনীরা এই ওয়াকিটকি ব্যবহার করে থাকে।

তাছাড়া বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা নির্মাণের কনস্ট্রাকশন সাইডে, গার্মেন্টস শিল্পের কারখানায়, বিভিন্ন পন্যের গোডাউনে, পাওয়ার স্টেশন ও শপিংমল ছাড়াও ব্যক্তিগত বিভিন্ন কাজে walkie-talkie ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

ওয়াকিটকি আইন 

ওয়াকি টকি ব্যবহার করার জন্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের ২০১৯ একটি আইন তৈরী করে ছিল। যে আইন এর মাধ্যমে যদি কেউ walkie-talkie ব্যবহার করে, তাহলে অবশ্যই তাকে লাইসেন্স করে নিতে হবে। লাইসেন্স ছাড়া যদি কেউ ওয়াকি টকি ব্যবহার করে তাহলে তার ৩০০ কোটি টাকা জরিমানা সহ ৯৯ বছর পর্যন্ত যেতে পারে।

ওয়াকিটকির মুল্য কেমন?

আপনার প্রয়োজনের জন্য ওয়াকি টকি ক্রয় করতে চান তাহলে আপনার আগেই একটা ওয়াকিটকির লাইসেন্সের প্রয়োজন হবে। আর আপনার যদি লাইসেন্স থাকে তাহলে ওয়াকি টকি অবশ্যই ক্রয় করতে পারবেন।

এখন হয়তো আপনি ভাবছেন যে, একটা walkie-talkie মূল্য কত টাকা হবে? আসলে একটা ওয়াকি টকির ক্রয়মূল্য যত টাকাই হোক না কেন, walkie-talkie ক্রয় করা পরেও আপনি যদি আপনার সাথে ওয়াকি টকি টা রাখেন। তাহলে আপনাকে সরকারের কিছু নিয়ম অনুযায়ী প্রতিবছর একটা পরিমাণ টাকা ট্যাক্স দিতে হবে।

তো চলুন জেনে নেই এক টাকার দাম কত? আসলে এটা ওয়াকি টকির দাম বাংলাদেশের বিভিন্ন রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি অনুযায়ী আলাদা আলাদা হতে পারে। কোন একটা ওয়াকি টকি দাম ৫,০০০ টাকা আর এমন walkie-talkie রয়েছে যেগুলোর দাম দাম প্রায় ৫০ হাজার টাকা। তবে আপনি বাংলাদেশের বাজারে ৫-১০ হাজার টাকার মধ্যে খুব সুন্দর ভালো রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি অনুযায়ী walkie-talkie পেয়ে যাবেন।

ওয়াকি টকি ক্রয় করার পরও আপনাকে প্রতিবছর সরকারকে প্রায় পাঁচ হাজার টাকার মত এরকম বেশি হতে পারে ট্যাক্স দিতে হবে। আপনি যত বছর একটি walkie-talkie আপনার কাছে রাখবেন ঠিক তত বছর পর্যন্ত আপনাকে ট্যাক্স পরিশোধ করতে হবে।

একটা walkie-talkie ক্রয় করার পরেই আপনার আর কোন টাকা খরচ হবে না এটা ভাবা বোকামি। নির্দিষ্ট একটি ফ্রিকোয়েন্সির walkie-talkie ক্রয় করার পরেও আপনাকে সরকারকে প্রতি বছরে বছরে নির্দিষ্ট পরিমান টাকা ট্যাক্স হিসেবে দিতে হবে।

ওয়াকিটকি কোথায় থেকে কিনবো?

আপনাদের ওয়াকি টকি যদি খুবই প্রয়োজন হয় তাহলে আপনি বিভিন্ন মার্কেট থেকে অথবা বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিক্স পণ্যের দোকান থেকে walkie-talkie ক্রয় করতে পারবেন। তবে আপনি চাইলে অনলাইনের মাধ্যমে বাংলাদেশে অনেক ওয়েবসাইট রয়েছে।

সেসব ই কমার্স ওয়েবসাইট যেগুলো walkie-talkie বিক্রি করে থাকে। সেখান থেকে walkie-talkie ক্রয় করতে পারেন। যেহেতু অন্যান্য ইলেকট্রনিক্স পণ্যের মত ওয়াকি টকি কোন সাধারন পণ্য নয় তাই এটা ক্রয় করার আগে আপনাকে কিছু বিটিআরসির সরকারি বিধি নিষেধ মেনে চলতে হবে। নয়তো আপনি জেল- জরিমানা সহ বিভিন্ন ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন।

তবে যদি আপনি যদি খুব প্রয়োজনে ওয়াকিটকি ক্রয় করতে চান তাহলে ওয়াকিটকির ব্যবহার করার লাইসেন্স করার পর, আপনি লাইসেন্স সহ বাংলাদেশের বড় বড় ইলেক্ট্রনিক যেকোন দোকান থেকেই ওয়াকি টকি ক্রয় করতে পারবেন। এছাড়াও চাইলে অনলাইনের মাধ্যমে অনেক ওয়েবসাইট রয়েছে যারা walkie-talkie বিক্রয় করে থাকে তাদের কাছ থেকে ও ক্রয় করতে পারবেন।

ওয়াকিটকি ব্যবহার করার আগে সাবধান

আপনি যদি আগে থেকে ব্যবহার করেন তাহলে আপনার অবশ্যই ওকি টকি ব্যবহার করার আগে কিছু কিছু বিষয় থেকে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। যেহেতু walkie-talkie ব্যবহার করার জন্য বাংলাদেশের নির্দিষ্ট আইন ও নিয়মকানুন রয়েছে। তাই যদি কখনো walkie-talkie ব্যবহার করেন তাহলে অবশ্যই বাংলাদেশের আইন এবং নিয়মকানুন মেনে ব্যবহার করবেন।

কখনো আইন অমান্য করে walkie-talkie কিনতে যাবেন না এবং ব্যবহার করতে যাবেন না। যদি কখনো বাংলাদেশের আইন অমান্য করে এবং লাইসেন্স ছাড়াই আপনি walkie-talkie ব্যবহার করেন। তাহলে কিন্তু আপনার ৩০০ কোটি টাকা জরিমানা করা হতে পারে।

যা হয়তো আপনার দেয়া পক্ষে দেওয়ার সাধ্য নাও থাকতে পারে। এছাড়াও এই আইন অমান্য করে walkie-talkie ব্যবহার করার ফলে ৯৯ বছরের পর্যন্ত আপনার জেল জরিমান হতে পারে। তাই সব সময় সাবধানে walkie-talkie ব্যবহার করবেন। ব্যবহার করার আগে অবশ্যই দেশের আইন মেনে এবং লাইসেন্স করে ব্যবহার করবেন।

যদি আপনার খুবই প্রয়োজন হয় তাহলে অবশ্যই আপনি লাইসেন্স পাওয়ার জন্য বিআরটিসিতে আবেদন করলে লাইসেন্স খুব সহজেই পেয়ে যাবেন। অনেক ক্ষেত্রে আপনি লাইসেন্স একদম বিনামূল্যে পেয়ে যেতে পারেন। যদিও আপনাকে প্রতি বছরে একটি ওয়াকি টকি রাখার জন্য নির্দিষ্ট পরিমান ট্যাক্স সরকারকে দিতে হবে।

শেষ কথা

আশা করি আপনি আমাদের আর্টিকেল এর মাধ্যমে খুব সহজেই বুঝতে পেরেছেন যে ওয়াকিটকি কি ও কিভাবে কাজ করে? এর পরও যদি কোন কিছু বুঝতে অসুবিধা হয় তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করে আপনার সমস্যাটা সমাধান করে দেওয়ার চেষ্টা করবো। তো আজকের মত এ পর্যন্তই ছিল ওয়াকিটকি কি ও ওয়াকিটকি কিভাবে কাজ করে?

আর হ্যাঁ আপনি যদি নতুন কোন বিষয়ে নতুন কোনো আর্টিকেল চান, তাহলে উক্ত বিষয়টি কমেন্ট করে লিখে আমাদেরকে জানাতে পারেন। আমরা খুব শীঘ্রই আপনার বিষয়টি নিয়ে নতুন লেখা পাবলিশ করার চেষ্টা করব।

আজকের মত এ পর্যন্তই ছিল, দেখা হবে আবার নতুন কোন আর্টিকেলে নতুন কোন বিষয় নিয়ে। ততক্ষণ পর্যন্ত আপনারা সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।
ধন্যবাদ।

Updated: April 12, 2022 — 7:50 pm