গর্ভাবস্থার প্রথম তিনমাস খুবই সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়, তাই গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণগুলো জানা সকলের জন্যই জরুরী। অনেকেই পিরিয়ডের হিসাব রাখেন না কিংবা হিসাব রাখলেও অজ্ঞানতার কারণে গর্ভবতী কিনা জানার জন্য অনেকেরই ছুটতে হয় ডাক্তারের কাছে।
ঘরে বসেই যেন গর্ভধারণের লক্ষণ দেখে বুঝতে পারেন, সেজন্য নিচের বিষয়গুলো জেনে রাখতে পারেন।
গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ
সাধারণত ২৮ দিন পর পর পিরিয়ড হলেও যে কোন কারণে কখনো তা দেরী হতে পারে। তবে এক-দুই সপ্তাহের বেশী দেরী হলে এবং নীচের লক্ষণগুলো প্রকাশ পেলে নিশ্চিত হওয়া জরুরী।
মাথা ঘোরা, বমি
গর্ভধারণের প্রথম দিকে প্রায়ই মাথা ঘোরা, অকারণেই কিংবা খাবারের সামনে আসলে বমিভাব হতে পারে।
রক্তপাত
অনেক সময় পিরিয়ডে খুব মৃদু ও সল্প সময়ের জন্য রক্তপাত হয়ে বন্ধ হয়ে যায়৷ প্রথম অবস্থায় গর্ভধারণের লক্ষণ হতে পারে এটিও।
স্তনের পরিবর্তন
মেয়েরা গর্ভবতী হওয়ার পর সাধারণত স্তনের গঠনগত পরিবর্তন আসে। আকৃতি বড় হওয়া ছাড়াও নিপল ও এর চারপাশের রং গাঢ় হয়ে ওঠে। এছাড়া স্তনের ত্বকেও কিছুটা ঔজ্জ্বল্য ও কোমলতা দেখা যায় অনেক ক্ষেত্রে৷
স্পটিং
অনেকের ক্ষেত্রে স্পটিং বা সাদাস্রাব হয়ে থাকে।
পেটের আকৃতির পরিবর্তন
হরমোন জনিত কারণে পেট বা কোমর কিছুটা স্ফিত হতে পারে৷ পরিধেয় বস্ত্র আঁটোসাটো লাগা থেকে গর্ভবতী তা নিজেই অনুভব করতে পারবেন।
ঘনঘন মেজাজের উঠানামা
গর্ভাবস্থায় মেয়েদের হরমোন জনিত কারণে মানসিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়৷ এসব ক্ষেত্রে হুট করে রেগে যাওয়া, স্পর্শকাতর হয়ে ওঠা, আবেগের অত্যাধিক প্রভাব দেখা যায়। কিন্তু আবেগের কোন স্তরেই দীর্ঘ সময় স্থির থাকে না।
এসব লক্ষণগুলো দেখা দিলে গর্ভধারণ নিশ্চিত কিনা তা জানার জন্য নিম্নোক্ত পদ্ধতিগুলো অবলম্বন করতে হবে।
প্রেগন্যান্সি স্ট্রিপ
ঘরে বসে নিজেই গর্ভধারণ নিশ্চিতে পরীক্ষাটি করে নেয়া যায়। সব ফার্মেসীতেই স্ট্রিপ কিনতে পাওয়া যায় এবং এর সাথে সকল নির্দেশনা দেয়া থাকে।
রক্ত পরীক্ষা
ডাক্তারের কাছে গিয়ে রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে গর্ভধারণের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়।
গর্ভবতী মায়ের আমল
সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ পবিত্র কোরআনেই আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, “তার মা কষ্টের পর কষ্ট ভোগ করে তাকে গর্ভে ধারন করেন।” এতো কষ্টের পুরষ্কারও আল্লাহ দেন। গর্ভাবস্থার পুরো সময়টাই নারীর জন্য সওয়াব এবং ফজীলতের।
গর্ভাবস্থায় নারীর চলাচল ও জীবন যাপন পদ্ধতির প্রভাব সন্তানের পরবর্তী জীবনের ওপর পড়ে। তাই এ সময় সাবধানতার সাথে চলাচল করা উচিৎ মায়ের। যদিও গর্ভধারণের সময়ে নির্দিষ্ট কোন আমল করার নির্দেশ কোরআনে আসেনি, তবে কিছু তরীকা অনুসরণ করলে নেক সন্তান লাভে সুফল পাওয়া যায়।
গুণাহ বর্জন করা
সকল প্রকার গুণাহের কাজ বর্জন করা নিঃন্দেহে সন্তানের নেক হয়ে বড় হবার সবচেয়ে ভালো পথ।
কোরআন তেলওয়াত
নিয়মিত কোরআন তেলওয়াত করে অন্তত এক বা একাধিকবার খতম করা উচিৎ গর্ভাবস্থায়। এতে করে গর্ভে থাকা সন্তানের কানে আল্লাহর বাণী পৌছায়, যা তাকে নেক সন্তান হয়ে ওঠার প্রেরণা দেবে।
সূরা আলে ইমরান, সূরা ইউসুফ, সূরা মারইয়াম, সূরা লুকমান, সূরা মুহাম্মাদ – এই কয়েকটি সূরা তুলনামূলক বেশী তিলাওয়াত করা উচিৎ সম্ভব হলে।
নামাজ আদায়
নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের সাথে সাথে সম্ভব হলে তাহাজ্জুদের নামাজও আদায় করা উচিৎ। এতে করে শারীরিক ব্যায়ামও হয়ে যায়, যা গর্ভাবস্থায় মা এবং সন্তান উভয়ের জন্যই উপকারী।
বিশেষ দোয়া
“রাব্বি হাবলী মিলাদুনকা জুররিইয়্যাতান তায়্যিবাহ, ইন্নাকা সামীউদ-দুআ।”(হে আমার পালনকর্তা! আপনার পক্ষ থেকে আমাকে পুত-পবিত্র সন্তান দান করুন। নিশ্চয়ই আপনি প্রার্থনা শ্রবণকারী। – সূরা আলে ইমরান: ৩৮)
সন্তানের সুস্থতার জন্য পিতা মাতা উভয়েরই সবসময় এই দোয়াটি পাঠ করতে হবে।
শেষ কথা
সর্বোপরি আল্লাহর ওপর ভরসা রাখতে হবে এবং শরীয়ত সম্মত উপায়ে জীবন যাপন করলে গর্ভাবস্থার জটিলতা যেমন কমে যাবে, তেমনি দুশ্চিন্তাও দূর হবে।
আল্লাহ সকলকে নেক সন্তান লাভে তাওফিক দান করুন।