হ্যালো বন্ধুরা কেমন আছেন সবাই আশা করি সবাই অনেক ভাল আছেন। তো আজকে আমি আপনাদের সাথে আলোচনা করব দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র সম্পর্কে। দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র কি দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র কিভাবে প্রতিকার করা যায় এসব বিষয় নিয়ে আজকের এই পুরো আর্টিকেলে আলোচনা করা হবে। তো চলুন শুরু করা যাক।
আমাদের দেশের মতো পৃথিবীর বহু দেশে উন্নয়নের নীরব ঘাতক এর নাম হলো দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র। দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র পৃথিবীর প্রত্যেকটা দেশকে নীরবে কুরে কুরে খায়। তাদের কে অর্থনৈতিক ভাবে সামাজিক ভাবে উন্নয়নশীল পথে এগোতে দেয় না। এই দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র শুধুমাত্র একটি দেশ খুবই অর্থনৈতিক ভাবে ভোগান্তিতে পড়ে। আর সেই সাথে দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি করে যা বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতিটা ক্ষেত্রে সমান ভাবে প্রভাব ফেলে।
দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র শুধুমাত্র আমাদের বাংলাদেশেই নয় পৃথিবীর প্রতিটা দেশের প্রতিটা মানুষ ও প্রত্যেকটা সমাজে আজ খুবই ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করেছে। দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র সম্পর্কে জানতে হলে আগে আমাদের জানতে হবে দারিদ্র সম্পর্কে।
দারিদ্র কি?
আমাদের সমাজে বসবাসকারী যেসব মানুষ জীবনযাপনে তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে পারে না তাদেরকে মূলত দরিদ্র বলা হয়।
এখন এই জীবন যাপনের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস হতে পারে থাকার বাসস্থান নেই, খাবার খাওয়ার টাকা নেই বা বাস্তুহারা এবং সারা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিভিনন্ন ছিন্নমূল মানুষ। এরাই আসল মূলত দরিদ্র। দরিদ্র কি তা আমাদের জানা হবে এখন চলুন জেনে নেওয়া যাক দরিদ্র সাথে দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র কি সম্পর্ক। আর দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র কাকে বলে অথবা দারিদ্রের দুষ্টচক্র ই বা কি।
দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র কি?
এখন যারা যারা হতদরিদ্র তারা কিন্তু তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন জীবন যাপন করা যা যা প্রয়োজন সেসব ক্রয় করতে পারে না। তারা যেহেতু ক্রয় করতে পারেন তাহলে তারা কিভাবে সঞ্চয় করবে। আর সঞ্চয় যত কম ততই তাদের মূলধন কম থাকে। আর তাদের এই মূলধন কম থাকার কারণে তাদের মাথাপিছু আয় কম থাকে। এই কারণে এই দরিদ্র থেকে দারিদ্র্যের দুষ্টচক্রের সম্পর্ক।
দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র কিভাবে সৃষ্টি হয়?
দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র পড়ার আগে আমাদের ফিরে যেতে হবে সেই ব্রিটিশ আমলে। যখন ব্রিটিশরা আমাদের ২০০ বছরের শাসন ও শোষণ করে আমাদেরকে দারিদ্র্যের মধ্যে নিঃস্ব করে দিয়েছিল। এরপরে দেশভাগের পর পাকিস্তানের ২২ থেকে ২৩ বছর শাসন ও শোষণ করে।
এর কারনেই মূলত আমরা শুরু থেকেই দারিদ্র্যের মাঝে ডুবে আছি। পাকিস্তান ও ব্রিটিশদের কারণে আমাদের এই বাংলা দারিদ্র্যের কালো ছায়া থেকে কখনো ভালভাবে বের হতে পারেনি। আর এই দারিদ্রের মাঝখান থেকে বের হওয়ার জন্য আমরা এখনো পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ব্রিটিশ ও পাকিস্তানের শাসন ও শোষণের কারনেই আমাদের দেশে দারিদ্র্যের জন্ম। এরপরে আমাদের দেশ স্বাধীন হওয়ার প্রায় অর্ধ বছর পেরিয়ে গিয়েছে আমরা আগে যতটা দারিদ্র্যের মধ্যে ছিলাম এখন তো আস্তে আস্তে কেটে উঠার চেষ্টা করছি।
দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র কিভাবে উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে?
যেকোনো একটি দেশের জনগণের আয় যদি কম হয় তাহলে ওই দেশের উৎপাদন কম হয় আবার উৎপাদন যদি কম হয় তাহলে জনগণের আয় ও কম হয়।
জনগণের এই আয় কম হওয়ার কারণে তাদের ক্রয় ক্ষমতা কম থাকে। সে কারণে সে তার দৈনন্দিন জীবনের চাহিদা ভালোভাবে পূরণ করতে পারেনা। কেননা ওই দেশের জনগণের ক্রয় ক্ষমতা কম বলে সেই দেশের বাজারে দ্রব্যের চাহিদা কম থাকে। এ কারণে ওই দেশে কোন বড় ধরনের বিনিয়োগ আসে না। আর এই বিনিয়োগ খুব কম বলেই ওই দেশের মূলধনের চাহিদাও কম থাকে।
এদিকে মূলধন এর চাহিদা কম থাকায় আবার উৎপাদন খুব কম হয়। যেই কারণে একটি দেশ উন্নয়নশীল হওয়ার জন্য যা যা উপাদান প্রয়োজন তার সবকিছুই দারিদ্রতম দেশগুলোতে অনুপস্থিত। তাই তারা কখনোই উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হতে পারেনা। আর এজন্যই দারিদ্র সম্পর্কে বলতে গিয়ে অধ্যাপক নার্কোস বলেছিল “একটি দেশ দরিদ্র কারণ সে দেশের জনগণ দরিদ্র”।
আর আমাদের দেশে কৃষি কাজ, নিরক্ষর জনগোষ্ঠী, প্রাকৃতিক সম্পদের অভাব সহ আরও কয়েকটি কারণে দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র প্রতিনিয়ত আমাদের দেশের অর্থনীতিতে ঘুরপাক খায়। যে কারণে আমরা উন্নয়নশীল দেশের কাতারে প্রবেশ করতে প্রচন্ড পরিমানে বাধার সম্মুখীন হই। কেননা একটি দেশ দরিদ্র হওয়ার মূল কারণ হলো সে দেশের মূলধন কম কেননা সে দেশের জনগণ দরিদ্র থাকায় তাদের মাথাপিছু আয় ও ভোগ কম। তারা সঞ্চয় করতে পারে না। যেহেতু তারা সঞ্চয় করতে পারেনা তাই তাদের মূলধন কম থাকে। আর এই মূলধন কম থাকার কারণে ওই দেশটি উন্নয়নের পথে আর এগোতে পারে না
আমাদের দেশ দরিদ্র হওয়ায় দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র প্রতিনিয়ত আমাদের দেশের অর্থনীতিতে ঘুরপাক খায়। আর এর মূল কারণ হলো আমাদের দেশে বড় একটি জনসংখ্যা যারা লেখাপড়া শেষ করে বেকার থাকে। তাদের যথেষ্ট পরিমান কর্মসংস্থানের অভাবে তারা কাজ করতে পারে না। এ ছাড়াও আমাদের দেশে প্রয়োজনীয় দক্ষতা ও পরিকল্পনার অভাবে যে সমস্ত প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে সেইসব প্রাকৃতিক সম্পদ গুলো কে সঠিকভাবে কাজে লাগানো যায় না।
আর যদি এই সঠিকভাবে প্রাকৃতিক সম্পদকে কাজে লাগানো যেত তাহলে আামাদের দেশে দারিদ্রের দুষ্ট চক্র থেকে বের হয়ে আসতে পারে। আপনি জানলে অবাক হবেন যে বিশ্বের প্রায় ৭৫ ভাগ সম্পদের মালিক এই মাত্র ২০% লোক। আর বাকি ২৫ ভাগ সম্পদের মালিক ৮০% মানুষদের কাছে আছে। আর এই ৮০% মানুষ হলো গরীব ও মধ্যবিত্ত পরিবার।
দারিদ্র্যের দুষ্টুচক্রের প্রতিকার করব কিভাবে?
প্রতিটা দেশের এই দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র থেকে বের হয়ে আসা খুবই দরকার। কেননা যদি অর্থনৈতিক ভাবে উন্নয়ন করতে হয় দেশকে তাহলে অবশ্যই এই দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র থেকে আগে বের হবে। নয়তো কখনোই অর্থনৈতিকভাবে উন্নয়ন করলেও ততটা লাভ হবে না।
আমাদের দারিদ্র বিমোচন করার বিভিন্ন প্রকল্প সমূহ দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। যার মাধ্যমে দরিদ্র মানুষেরা তাদের মাথাপিছু আয় বাড়বে তাদের সঞ্চয় বাড়বে, নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ পণ্যের চাহিদা বাড়বে, সেই সাথে দেশের অর্থনীতিতে ও দেশের জিডিপিতে ভালো অবদান রাখতে পারবে। দেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে ঢুকতে পারবে। এতে দেশে বিনিয়োগ বাড়বে প্রতিদিন নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এভাবে আমরা আমাদের দারিদ্র্য দুষ্টচক্রের দেয়াল থেকে বের হতে পারবো।
আর যদি দারিদ্র্য বিমোচন না হয় তাহলে দেশ অর্থনৈতিকভাবে উন্নয়ন হলে সঞ্চায় বাড়বে না, মাথাপিছু আয় বাড়বে কম, সেই সাথে বিনিয়োগ বাড়বে না ও দেশের যথেষ্ট কর্মসংস্থান সৃষ্টি না হলে বেকারত্বের হার দিন দিন বৃদ্ধি পাবে। দেশের চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন ও বৃদ্ধি পাবে না আর তখন দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র থেকে বের হওয়া যাবে না। দেশ ধীরে ধীরে অর্থনৈতিক ভাবে ভেঙে পড়বে।
শেষ কথা
দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র থেকে বের হতে হলে আগে দেশের দারিদ্র্য বিমোচন করতে হবে। আর এই দারিদ্র্য বিমোচন করতে হলে একটি দেশ ও দেশের সরকারকে দারিদ্র মুক্ত করার জন্য বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিতে হবে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে আস্তে আস্তে দেশ দারিদ্র্য বিমোচক থেকে বের হতে পারবে।
দারিদ্র বিমোচন হয়ে ধীরে ধীরে দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র থেকে দেড় খুব সহজেই রেহাই পেয়ে যাবে। সেই সাথে দেশ অর্থনৈতিকভাবে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে গড়ে উঠবে। তো আজকের আর্টিকেলে আমরা শেয়ার করার চেষ্টা করেছি দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র সম্পর্কে।
অনেকে হয়ত দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র সম্পর্কে জানেন না। কেউ কেউ হয়তো দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র সম্পর্কে ভুল ধারণা পোষণ করেছে এবং অনেকেই দারিদ্র দুষ্ট সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান টুকু ও হয়ত ছিল না। আজকের এই আর্টিকেল পড়ে জানতে পেরেছেন যে কিভাবে দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র কিভাবে একটি দেশকে পঙ্গু করে দিতে পারে অর্থনৈতিকভাবে বা সামাজিকভাবে।
এরপরেও যদি কারো দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র সম্পর্কে কোন কিছু জানার থাকে অথবা দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র সম্পর্কে কোন কিছু বুঝতে অসুবিধা হয় তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে আমাদেরকে জানাতে পারেন। আমরা আপনার প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তো আজকের মত এ পর্যন্তই ছিল দেখা হবে আবার নতুন কোন আর্টিকেল এ কোন বিষয় নিয়ে। ততক্ষণ পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন খোদা হাফেজ।