হ্যালো বন্ধুরা কেমন আছেন সবাই, আশা করি সবাই অনেক ভাল আছেন। তো আজকে আমরা আপনার সাথে আলোচনা করতে যাচ্ছি ইউক্রেন দেশ সম্পর্কে বিভিন্ন অজানা তথ্য উপাত্ত নিয়ে। ইউক্রেন দেশ সম্পর্কে বিভিন্ন জানা-অজানা তথ্য গুলো চলুন জেনে নেওয়া যাক।
ইউক্রেইন দেশ
ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাষ্ট্র হল ইউক্রেন বা উক্রাইনা। রাশিয়ার পরে আয়তনের দিক দিয়ে ইউরোপ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ হল ইউক্রেন। ইউক্রেনের ক্রিমিয়া মোট আয়তন হল ,০৩,৬২৮ বর্গকিলোমিটার ও ২৭,০০০ বর্গকিলোমিটার।
যদিও ২৭,০০০ বর্গকিলোমিটারের রাশিয়া ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখল করে নিয়েছে। কিন্তু আন্তর্জাতিকভাবে ক্রিমিয়া এখনো ইউক্রেইন এর। এছাড়াও ২০২২ সালে ইউক্রেনের দুইটি প্রদেশ রাশিয়ার সাহায্যের মাধ্যমে নিজেদের কে স্বাধীনতা ঘোষণা করেছে যার কারণে ইউক্রেনের আয়তন আরো কমে গিয়েছে। ইউক্রেনের অর্থনীতি উন্নত এবং কৃষিপ্রধান ও শিল্প খাত যথেষ্ট পরিমাণে বড়।
ইউক্রেন এর ইতিহাস
ইউক্রেনে খ্রিস্টপূর্ব ৩২শ শতক আগে প্রথম মানব বসতির প্রমাণ মিলেছে। পূর্ব স্লাভীয় সংস্কৃতির একটি প্রধান স্থান ছিল। তখন ইউক্রেনের পূর্ব স্লাভীয় রাষ্ট্রীয় নাম ছিল কিয়েভান রুশ।
তেরোশো শতকে চেঙ্গিস খানের বংশধরদের আক্রমণে ইউক্রেনে প্রচুর পরিমাণে ক্ষয়ক্ষতি হয় এরপর বহু বছর ধরেই ইউক্রেন কে বিভিন্ন বিদেশি পরাশক্তি শাসন এবং শাসন করেছে।
এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো চেঙ্গিস খানের বংশধরদের
গোল্ডেন হোর্ড,
উসমানীয় সাম্রাজ্য,
রুশ জার সাম্রাজ্য,
অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি সাম্রাজ্য ও সর্বশেষ রাশিয়া তথা সোভিয়েত ইউনিয়ন।
ইউক্রেইন দেশের জন্ম কিভাবে?
১৯১৮ সালে ইউক্রেনের এর জাতীয়তাবাদী আত্মনিয়ন্ত্রণ আন্দোলনের জোরে রুশ বিপ্লবের পরে বলশেভিক সাম্যবাদী সরকার প্রতিষ্ঠিত হলেন ইউক্রেন গণপ্রজাতন্ত্রী নামক দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
এরপরে ১৯২২ সালে সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়ন গঠিত হলে ইউক্রেন প্রথম চারটি রাষ্ট্রের মধ্যে একটি হিসেবে নিজেদেরকে যুক্ত করে। ইউক্রেনকে সোভিয়েত ইউনিয়নের চারটি প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রের সদস্যদের মধ্যে অন্যতম একটি সদস্য রাষ্ট্র।
সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে রাশিয়া নামক রাষ্ট্রের জন্ম হওয়ার আগে ১৯৯১ সালের ইউক্রেন এর জনগণের একটি গন ভোটের মাধ্যমে নিজেদের কে স্বাধীনতা ঘোষণা করে। সদ্য স্বাধীন ইউক্রেন শুরুতে নিজেকে নিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে দাবি করে।
যদিও ইউক্রেন এর সাথে সীমিত আকারে রাশিয়ার সামরিক জোটে যোগ দেয় সেইসাথে আটলান্টিক নিরাপত্তা জোট (ন্যাটো) ১৯৯৪ সালে ইউক্রেইন নিজেদেরকে যুক্ত করে। কিন্তু পরবর্তীতে ২০১৩ সালে ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি ভিক্তর ইয়ানুকোভিচ আটলান্টিক নিরাপত্তা জোট ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে চুক্তি পত্র মুলতবি ঘোষণা করে। এই ঘোষণার মূল কারণ ছিল রাশিয়ার সাথে নিজেদেরকে অর্থনৈতিক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক সৃষ্টি করার। কিন্তু সমস্যাটি হয় তখন যখন ইউক্রেনের জনগণ “ইউরোপ ময়দান” নামক একটি মিছিল বের করে।
এর জের ধরেই মর্যাদা রক্ষা নামে একটি বিপ্লবের মাধ্যমে এ রাষ্ট্রপতিকে ক্ষমতাচ্যুত করে নতুন এক রাষ্ট্রপতি আগমন ঘটে। কিন্তু সমস্যাটা তখনই হয় যখন নতুন রাষ্ট্রপতি ইউক্রেনে আসার পরে তের চোদ্দ সালের মার্চ মাসে রাশিয়া আক্রমণ করে ক্রিমিয়া উপদল দীপ্তি তাদের নিয়ন্ত্রণে দখল করে নেয়
এরই জের ধরে পরবর্তীতে রুশ সমর্থিত বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ইউক্রেনের পূর্ব দিকে ইউক্রেইন সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ শুরু করে। তবুও ইউক্রেন ২০১৬ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মুক্তবাণিজ্য জন্য অর্থনৈতিক অঞ্চলে যোগ দেওয়ার আবেদন করে।
এরই জের ধরে ২০২২ সালে চব্বিশে ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেন কে আক্রমণ করে বসে যে আক্রমণ এখনো পর্যন্ত চলমান। এ আক্রমণ শুরু হওয়ার আগেই ইউক্রেনের দুইটি প্রদেশ নিজেদেরকে স্বাধীনতা ঘোষণা করে স্বাধীন হয়ে যায়।
ইউক্রেনের রাজধানীর নাম কি?
ইউক্রেনের রাজধানীর নাম হলো কিয়েভ। এই কিয়েভ ইউক্রেনের সবচেয়ে বৃহত্তম শহর। সেইসাথে ইউক্রেনের সবচেয়ে জনবহুল একটি শহর হল কিয়েভ। ইউক্রেন মূলত রাজনীতির একটি অর্ধ রাষ্ট্রপতি শাসিত প্রতিনিধিমূলক বহুদলীয় গণতান্ত্রিক কাঠামোয় পরিচালিত একটি দেশ।
ইউক্রেনে নির্বাহী ক্ষমতা মূলত মন্ত্রিসভার হাতে ন্যস্ত থাকে আর আইন প্রণয়নের ক্ষমতা থাকে আইনসভার হাতে। প্রতি পাঁচ বছর পরপর ইউক্রেনীয় জনগণের ভোটের মাধ্যমে ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়। সর্বশেষ ২০১৯ সালের ২০ই মে রাষ্ট্রপতি হিসেবে ভলোদিমির জেলেনস্কি রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করে। সবচেয়ে মজার একটি বিষয় হলো যে, এই ভলাদিমির জেলেনস্কি একজন ইউক্রেনীয় অভিনেতা।
ইউক্রেনের সাথে মোট আটটি দেশের ও দুটি সাগরের সঙ্গে সীমানা রয়েছে। এর মধ্যে দক্ষিণ পশ্চিমে রয়েছে মলদোভা ও রোমানিয়া, দক্ষিণ কৃষ্ণসাগরে ও আজভ সাগর, পশ্চিমে পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি, স্লোভাকিয়া, পূর্বে রাশিয়া এবং উত্তরে বেলারুশের সাথে এখানে রয়েছে বিশাল সীমানা।
কোন এক সময় ইউক্রেনকে প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়ন তথা বর্তমানে রাশিয়ার অর্থনৈতিক “রুটির ঝুড়ি” বলে ডাকা হতো। কেননা ইউক্রেনে ছিল কৃষি শিল্প ভরপুর একটি দেশ যা এখনও বিদ্যমান।
এছাড়াও ইউক্রেইনে রয়েছে চার কোটি বিশ লক্ষ হেক্টর আবাদি জমি। আর এই জমি ইউরোপে আবাদযোগ্য মোট ভূমির প্রায় ২৫%। এছাড়া এখানে রয়েছে ভারী শিল্প খাত জাতীয় অর্থনীতিতে যদিও অল্প পরিমাণে ভূমিকা পালন করে। কিন্তু সবচেয়ে মজার বিষয় হল যে, এক জরিপে দেখা গেছে যে ইউক্রেনের প্রায় ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ জিডিপি নিয়ন্ত্রণ করে মাত্র ১০০ জন ইউক্রেনীয় ধনী ব্যক্তি।
এতে বোঝা যায় ইউক্রেইনে যে কতটা পরিমাণে দুর্নীতি ভয়ঙ্কর আকারে রূপ ধারণ করেছে। এজন্যই প্রাক্তন ইউক্রেনীয় লেখক আন্দ্রেই কুরকোভ বলেছিল যে
“অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দুর্নীতিতে পরিণত করতে বাধ্য হয়েছে”।
ইউক্রেনে প্রায় চার কোটি ৩৬ লক্ষ ইউক্রেনীয় অধিবাসীর বসবাস। ইউরোপ মহাদেশের মধ্যে সর্বোচ্চ ৮ম জনবহুল দেশ হলো এই ইউক্রেন। তবে এর মধ্যে শুধুমাত্র ইউক্রেইীয় ই নয় অন্যান্য অনেক রুশ জাতিদের ও বসবাস ইউক্রেনে।
ইউক্রেনের মুদ্রার নাম কি?
অনেকের কাছে হয়তো এটা তেমন একটা কমন বিষয় না। কিন্তু অনেকে জানতে চায় যে, ইউক্রেনের মুদ্রার নাম কি? তো যারা যারা জানেন তারা তো জানেন ই। আর যারা যারা জানেন না তারা তাহলে চলুন জেনে নেই ইউক্রেন এর মুদ্রার নাম কি? ও ইউক্রেনের কত টাকায় বাংলাদেশি কত টাকা।
ইউক্রেনিয়ান হ্রিবনিয়া কে UAH আর বাংলাদেশী টাকা কে BDT সংকেত ব্যবহার করা হয়। ইউক্রেন মুদ্রার নাম হলো হ্রিবনিয়া। ১ ইউক্রেনিয়ান হ্রিবনিয়া সমান বাংলাদেশী ২ টাকা ৯২ পয়সা।
তো চলুন ইউক্রেনিয়ান হ্রিবনিয়া এর সাথে আমাদের বাংলাদেশের টাকা কে একটু কনভার্ট করে দেখি কত টাকায় কতটা হ্রিবনিয়া। ইউক্রেনিয়ান ১০ হ্রিবনিয়া বাংলাদেশী ২৮ টাকা ২০ পয়সার সমান। আবার ইউক্রেনিয়ান ১০০ হ্রিবনিয়া বাংলাদেশী ২৯১ টাকা ৭৫ পয়সার সমান। এছাড়াও ইউক্রেনিয়ান ১,০০০ হ্রিবনিয়া বাংলাদেশি ২,৯১৭ টাকার সমান। সেই সাথে ইউক্রেনিয়ান ১০,০০০ হ্রিবনিয়া এ বাংলাদেশে প্রায় ২৮,১৭৪ টাকার সমান ।
এছাড়াও ইউক্রেনিয়ান ১০ হ্রিবনিয়া তে প্রায় ০.৩৩ ইউএস ডলার পাওয়া যায়। আপনার কাছে যদি ইউক্রেনিয়ান ১০ হ্রিবনিয়া থাকে তাহলে এই ১০ হ্রিবনিয়া তে ৩.৩৬ ডলার ইউএসডি ডলার পাবেন। ইউক্রেনিয়ান ১,০০০ হ্রিবনিয়া তে ১৬৮.৩৫ ইউএস ডলার পাবেন।
শেষ কথা
ইউক্রেন দেশটি নিয়ে কথা বললে কখনোই শেষ হওয়ার নয়। কেননা এটি যেমন বৈচিত্র্যপূর্ণ ঠিক তেমনি এই দেশকে নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংঘর্ষ কারণে আলোচিত।
বর্তমানে ইউক্রেনের বিভিন্ন স্থানে রাশিয়া আক্রমণ করেছে। যে কারণে বর্তমানে ইউক্রেন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে স্থান পেয়েছে। শুধু রাজনীতির বা যুদ্ধের কারনে ইউক্রেনের বিষয়টি সীমাবদ্ধতা নয়। ইউক্রেন দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখার মত যদি ইউক্রেন সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে চান তাহলে অবশ্যই কোন একটা সময়ে ইউক্রেনে ভ্রমণ করা যেতে পারে।
আজকের এই আর্টিকেল আমরা ইউক্রেন সম্পর্কে বিভিন্ন জানা-অজানা তথ্য আপনাদের সাথে শেয়ার করার চেষ্টা করেছি। যারা যারা ইউক্রেন দেশ সম্পর্কে এসব তথ্য গুলো জানতেন তাদের কে জানাই ধন্যবাদ। আর যারা ইউক্রেন সম্পর্কে এসব তথ্যগুলো জানতেন না তাদের জন্য হয়তো অনেক উপকারী হবে।
কেননা বিভিন্ন কারণে আমাদের পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ সম্পর্কে জানা উচিৎ। ইউক্রেন দেশ নিয়ে আজকের মত আমাদের আর্টিকেল পর্যন্ত ই ছিল। দেখা হবে আবার নতুন কোন আর্টিকেল এ নতুন কোন বিষয় নিয়ে। আর আপনার কোন বন্ধুবান্ধব যদি ইউক্রেন দেশ সম্পর্কে জানতে চায় তাহলে অবশ্যই আমাদের এই আর্টিকেলটি আপনার বন্ধু বান্ধবের সাথে শেয়ার করতে পারেন।
এতে করে আপনার বন্ধু বান্ধব ইউক্রেন সম্পর্কে বিভিন্ন জানা অজানা তথ্য জানতে পারবে। তো দেখা হবে নতুন কোন আর্টিকেলে নতুন কোন বিষয় নিয়ে আশা করি ততক্ষন পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন। আর হ্যাঁ আমাদের অন্যান্য আর্টিকেলগুলো উপভোগ করতে পারে।