রাশিয়ার মুদ্রার নাম কি? – জানুন রাশিয়া সম্পর্কে

রাশিয়া কে সরকারি ভাবে রুশ ফেডারেশন বলা হয়ে থাকে। রাশিয়ার পূর্বে ইউরোপ এবং উত্তরে এশিয়া অবস্থিত সেই সাথে রাশিয়া বিশ্বের সর্বোচ্চ বৃহত্তম দেশ।

রাশিয়া মূলত আধা রাষ্ট্রপতি শাসিত একটি দেশ। রাশিয়া দেশ একই সাথে ইউরোপ এবং এশিয়ার মধ্যে অবস্থিত। রাশিয়ার সাথে লাটভিয়া, লিথুনিয়া, পোল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, বেলারুশ, ইউক্রেন, কাজাখস্তান, উত্তর কোরিয়া, মঙ্গোলিয়া ও চীনের সাথে বিশাল সীমান্ত রয়েছে।

এছাড়াও রাশিয়ার অক্র্খত সাগরের সাথে জাপানের বেরিং প্রণালী এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কার সাথে সামুদ্রিক সীমানা রয়েছে। তবে সবচেয়ে একটি মজার বিষয় হলো যে, যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা এক সময় রাশিয়ার ছিল। যা পরবর্তীতে রাশিয়া ৯৯ বছরের জন্য আমেরিকার কাছে বিক্রি করে দেয়।

রাশিয়ার আয়তন কত?

পৃথিবীতে যত শতাংশ আবাদ যোগ্যভূমি রয়েছে তার ৮ ভাগের এক ভাগ এই রাশিয়ার ভিতরে অবস্থিত। রাশিয়ার আয়তন প্রায় ১৭,০৭৫,৪০০ বর্গকিলোমিটার বা ৬,৫৯২,৮০০ বর্গমাইল।

সেই সাথে রাশিয়া বিশ্বের জনবহুল দেশ যেখানে একটি আদমশুমারি অনুযায়ী ১৪৫ মিলিয়ন লোক বসবাস করে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ইউক্রেনের ক্রিমিয়া প্রজাতন্ত্রী বর্তমানে রাশিয়ার আয়তন আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।

রাশিয়ার উৎপত্তি কিভাবে?

রাশিয়া নামটি আসে মধ্যযুগে ইউরোপের একটি রাষ্ট্র থেকে রাশিয়া আছে। এখানকার অধিকাংশ মানুষ ছিল ইস্ট স্লাভ গোত্রের অন্তর্ভুক্ত। পরবর্তীতে ইস্ট স্লাভ গোত্রের জনগণ সব সময় তাদের নিজেদের দেশকে রুশ ‘কায়া যেমল্যা’ বলে ডাকতো এর অর্থ হল রুশদের ভূমি বা রুশ জায়গা। আর এই ইস্ট স্লাভ গোত্রের মানুষ মূলত ছিল সুইডিশ ভাইকিংস এর একটি গোত্র। ভাইকিংস দের এই গোত্র পরবর্তীতে রুশ নামটি তাদের রাজ্যের জন্য রাখে।

রাশিয়ার ইতিহাস শুরু হয় দ্বিতীয় থেকে অষ্টম খ্রিস্টাব্দের মধ্যকার কোন একটি সময়। যখন কোন একটি গোত্র ইউরোপ থেকে রাশিয়ায় আসে। বিভিন্ন ইতিহাসবিদের ধারণা তারা ছিল সুইডেন ভাইকিং থেকে আলাদা হওয়া কোন এক গোত্র।

এরপরে এসব ভাইকিংরা রাশিয়ায় রুশ রাজ্য গড়ে তুললেও পরবর্তীতে বাজেন্টাইন সাম্রাজ্যের মাধ্যমে রুশরা খ্রিস্টান ধর্মের আওতায় আসে। এরপরে রাশিয়ায় স্লাব ও বাজেন্টাইন সাংস্কৃতিক সংগঠন ঘটে অন্যরকম সংস্কৃতির বিকাশ ঘটে। পরবর্তীতে রাশিয়া অনেকগুলো ছোট ছোট অঞ্চলে ভাগ হয়ে যায় এই সুযোগে মোঙ্গল সাম্রাজ্যের চেঙ্গিস খান পুরো রাশিয়াকে দখল করে নেয় পরবর্তীতে বিভিন্ন যাযাবর লোকেদের এই এলাকাগুলো স্বর্গ হয়ে উঠে।
এরপরে রাজা রুশ কিভান সব গুলো রাজ্য জয় করে। পরে রাজতন্ত্র বিলুপ্ত হলে আর্বিভাব ঘটে সোভিয়েত ইউনিয়ন নামক সমাজতন্ত্রের। এর পরে ১৯৯৩ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গিয়ে অনেক গুলো রাষ্ট্রের জন্ম হলে তখন ই রাশিয়া হিসেবে আত্ম প্রকাশ ঘটে।

রাশিয়া দেশ সম্পর্কে অজানা তথ্য 

রাশিয়া মূলত আধা রাষ্ট্রপতি শাসিত একটি দেশ যেখানে প্রেসিডেন্টের সব ক্ষমতা থাকে। আর এই প্রেসিডেন্ট ই সাধারণত প্রধানমন্ত্রীর নিয়োগ দিয়ে থাকে। রাশিয়া ৮ টি ড্রিষ্ট্রিকে বিভক্ত হয়েছে সেগুলোর নাম নিচে দেয়া হলো;

১. সেন্ট পিটার্সবার্গ,
২.কালিনিনগ্রাদ
৩. ভলগা,
৪. নিঝনি নোভগরদ,
৫. কাজান,
৬.সামারা রোস্তভ-ন্য-দানু,
৭. ভলগোগ্রাদ,
৮. সোচি উরাল ইয়েকাতেরিনবুর্গ,

রাশিয়ার সাইবেরিয়া এলাকায় সব সময় প্রচুর পরিমাণে ঠান্ডা থাকে এবং সেইসাথে ঠান্ডা হাওয়া বইতে থাকে। আবার অন্যদিকে রাশিয়ার দক্ষিণাংশের অনেকাংশ সাইবেরিয়ার থেকে প্রচুর গরম থাকে।

রাশিয়ার প্রকৃতিক পরিবেশ খুবই কষ্টকর কেননা সেখানে প্রচুর পরিমাণে ঠান্ডা। রাশিয়া এর বিভিন্ন ড্রিষ্টিক গুলোতে প্রচুর পরিমাণে বরফে ঢেকে যায়। সেখানে প্রায় বছরে প্রায় ৮ মাস এই বরফের নিচে ঢাকা থাকে এবং বাকি চার মাস রুশ নাগরিকরা কোন মতে জীবন যাপন করে। তবে সবচেয়ে একটি মজার বিষয় হলো যে প্রতিটি রুশ নাগরিক এই হাড় কাঁপানো ঠান্ডা ভিতর থাকতে থাকতে একটা অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। এরা এইসব প্রতিকূল পরিবেশের সাথে নিজেদেরকে খুব সহজেই মানিয়ে নিয়েছে।

রাশিয়ার মুদ্রার নাম কি?

অনেকের কাছে হয়তো এটা তেমন একটা কমন বিষয় না। কিন্তু অনেকেই জানতে চাই যে রাশিয়ার মুদ্রার নাম কি। তো যারা যারা জানেন তারা তো জানেন ই। আর যারা যারা জানেন না তারা তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক রাশিয়ার মুদ্রার নাম কি।

রাশিয়ার মুদ্রার নাম হলো রুবল।

তো চলুন রাশিয়ান রুবেল এর সাথে আমাদের বাংলাদেশের টাকা কে একটু কনভার্ট করে দেখি। রাশিয়ান ১ রুবল বাংলাদেশি 82 পয়সার সমান। রাশিয়ার ১০ রুবলে বাংলাদেশি ৮ টাকা ২৮ পয়সার সমান। এছাড়াও রাশিয়ার ১,০০০ রুবল বাংলাদেশি ৮২৮ টাকা। সেই সাথে রাশিয়ার ১০,০০০ রুবেল এ বাংলাদেশে প্রায় ৮,২০০ টাকার সমান ।

এছাড়াও ১ ডলারে রাশিয়ায় প্রায় ১০৩ রুবল পাওয়া যায়। আপনি যদি ১০ ডলার ইউএসডি ডলার কিনেন তাহলে সেই ডলার ভাঙ্গালে আপনি প্রায় ১০৪৯ রুবেল পাবেন। রাশিয়ায় ১,০০০ ডলারের রাশিয়ান ১০৩,৯৪৫ রুবল পাওয়া যায়।

রাশিয়ার অর্থনীতি ও বানিজ্য

রাশিয়ার রাজধানী মস্কো বিশ্বের সর্ববৃহৎ একটি অর্থনৈতিক নগরী। সেই সাথে এটা ইউরোপের একটি প্রধান আর্থিক কেন্দ্র বলা যায়। রাশিয়ায় প্রচুর পরিমাণে খনিজ সম্পদ এর মজুদ রয়েছে। সেইসাথে ইউরোপের সর্বোচ্চ তেল ও গ্যাস আমদানি করে থাকে রাশিয়া। কয়লা, তেল, গ্যাস সহ রাশিয়া প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর একটি দেশ।

তাছাড়া রাশিয়া বিশ্বের বৃহত্তম একটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশ। সেই সাথে রাশিয়ার রয়েছে বিভিন্ন ধরনের বিশাল অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ এর ভান্ডার। এছাড়াও রাশিয়ার রয়েছে জাতিসংঘের স্থায়ী ৫ সদস্য এর একটি সদস্য পদ। সেইসাথে জি২০, জি৭ এবং কাউন্সিলর অফ ইউরোপ, এশিয়া প্যাসিফিক ইকোনমিক, কোঅপারেশন সহযোগিতা সংস্থা সহ বিশ্বের বিভিন্ন বাণিজ্য সংস্থার সদস্যপদ।

সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর রাশিয়ার একটি পরিকল্পিত অর্থনৈতিক অবস্থার আগমন ঘটে। সেই সাথে নব্বইয়ের দশকে রাশিয়াতে লাগামহীনভাবে পুঁজিবাদী অর্থনীতি বিস্তার লাভ করে। আর এই কারণে রাশিয়ার ভিতরে অল্প সংখ্যক কিছু ক্ষমতাবান ব্যক্তি দের কাছে বেশিরভাগ সম্পদ কুক্ষিগত হয়ে যায়। ১৯৯৮ সালে রাশিয়ার অর্থনীতিতে প্রচুর পরিমাণে ধ্বস নামে। কিন্তু তখন বিশ্ববাজারে তেলের প্রচুর দাম থাকায় রাশিয়ায় সেই অর্থনৈতিক মন্দা থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে তুলে।

রাশিয়াতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক গ্যাস কয়লা ও তেলের ভান্ডার। এই তেল, গ্যাস, কয়লা রাশিয়ার অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রাশিয়াতে ২০০৬ সালের এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে প্রতিটি রাশিয়ান নাগরিকদের মাসিক আয় মাত্র ৮০ ডলার। কিন্তু ২০১০ আরেকটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে সেটা প্রতিটি রুশ নাগরিকের মাসিক আয় ৭৫০ ডলার উন্নতি হয়েছে।

রাশিয়ার ভাষা কি?

রাশিয়া দেশ সম্পর্কে জিনিসকে সবচেয়ে বেশি বিস্ময়কর বিষয় সেটা হল রুশ ভাষা বা রুশ প্রজাতন্ত্রের সরকারি ভাষা সম্পর্কে। রাশিয়ার সরকারি ভাষা রুশ হওয়া সত্বেও প্রায় অনেক মানুষ তাদের নিজেদের আলাদা আলাদা ভাষায় কথা বলে। যদিও সবাই রুশ ভাষা পারে কেননা রাশিয়ার প্রায় ১০০% মানুষের ভিতরে ৮০% মানুষ এই রুশ ভাষাতে কথা বলতে পারে এবং কথা বলে। তবে রুশ ভাষা ছাড়া আর কতগুলো আঞ্চলিক ভাষা রয়েছে। এগুলো সহ সরকারি ভাষার মর্যাদা পেয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো;
তাতার ভাষা,
চেচেন ভাষা,
চুভাশ ভাষা
কালমিক ভাষা,
অ্যাভার ভাষা,
বুরিয়াত ভাষা,
কাবার্দিয়ান ভাষা,
কোমি ভাষা,
মারি ভাষা,
উদমুর্ত ভাষা,
মর্দভিন ভাষা,
ওসেটীয় ভাষা,
তুভিন ভাষা,
ইয়াকুত ভাষা,
বাশকির ভাষা
এছাড়াও আরো অনেকগুলো ভাষা রুশ ভাষার সাথে সহ সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃত।

সবকিছুর সাথেই রাশিয়া দেশটি খেলাধুলা থেকেও খুব একটা পিছিয়ে নেই। রাশিয়া ১৮৮০ সালে গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক গেমস এর আয়োজন করে প্রথমবারের মতো এবং পরবর্তীতে শীতকালীন অলিম্পিক ২০১৪ সালে রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত হয় এছাড়াও ২০১৮ সালে প্রথমবারের মতো ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজন করে। এছাড়া রাশিয়া বিভিন্ন অলিম্পিক গেমসে বিভিন্ন পদক জেতায় বিশ্বের দ্বিতীয় দেশ। যারা বিভিন্ন অলিম্পিক গেমসে অংশগ্রহণ করে প্রচুর পরিমাণে স্বর্ণ, রৌপ্য এবং ব্রোঞ্জ পদক অর্জন করে।

শেষ কথা

রাশিয়াকে নিয়ে আমরা যতই আলোচনা করি না কেন এর কোনো শেষ হবে না। রাশিয়া যেমন বিভিন্ন বিচিত্রপূর্ণ পরিবেশে ভরপুর ঠিক তেমনি দেশটির আয়তন পুরো পৃথিবীতে অবাক করার মত একটা বিষয়। রাশিয়া দেশ নিয়ে লেখা শুরু করলে কখনোই শেষ হবার নয় যতটুকু পারা যায় রাশিয়া দেশ সম্পর্কে, রাশিয়ার ইতিহাস সম্পর্কে, রাশিয়ার মুদ্রা ব্যবস্থা সম্পর্কে, রাশিয়ার উৎপত্তি সম্পর্কে, সবই কম বেশি আমরা লেখার চেষ্টা করে আপনাদেরকে জানানোর চেষ্টা করেছি।

জানি হয়তো রাশিয়া সম্পর্কে কম ই লিখে ফেলেছি কিন্তু যতটুকু পেরেছি আপনাদের জন্য ততটুকুই লিখেছি। রাশিয়া দেশ সম্পর্কে আজকের আমাদের এই এ পর্যন্তই ছিল দেখা হবে আবার নতুন কোন আর্টিকেলে নতুন কোন বিষয় নিয়ে।

ততক্ষণ পর্যন্ত সবাই আমাদের এই সাইটের অন্যান্য আর্টিকেলগুলো পড়তে পারেন। আর আমাদের রাশিয়ার সম্পর্ক যদি কোন কিছু বুঝতে অসুবিধা হয় তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাতে পারেন।
আমরা শীঘ্রই আপনার সমস্যার সমাধান করে দেওয়ার চেষ্টা করব। দেখা হবে নতুন কোন আর্টিকেলে নতুন কোন বিষয় নিয়ে ততক্ষণ পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন। আপনার কোন বন্ধুবান্ধব যদি রাশিয়া সম্পর্কে কিছু জানতে আগ্রহী হয় তাহলে অবশ্যই তার সাথে আমাদের এই আর্টিকেলটি শেয়ার করবেন।