প্রতিটা নারীর গর্ভাবস্থায় খাবার খাওয়ার সময় দেখে শুনে খেতে হয়। কারণ গর্ভাবস্থায় থাকাকালীন মায়েরা অনেকগুলো ভুল খাবার খেয়ে থাকে।
যেসব খাবার গুলো খাওয়ার কারণে তাদের বিভিন্ন সমস্যা হয় এমনকি কিছু কিছু খাবার খেলে তাদের বাচ্চা নষ্ট হয়ে যায়।
তাছাড়াও প্রতিটা মায়ের নিয়মিত সঠিক এবং পুষ্টিকর খাবার গুলো খেতে হবে।
সঠিক খাবারগুলো খাওয়ার কারণে তার পেটে থাকা বাচ্চা ও খুব সুস্থ-সুন্দর ভাবে বেড়ে ওঠে সেইসাথে মা ও শিশু দুজনে ভালো থাকে।
এজন্য প্রতিটা মায়ের গর্ভাবস্থায় কী কী খাবার খাওয়া উচিত এবং কি কি খাবার খাওয়া উচিত না সে সম্পর্কে জানতে হবে।
নয়তো যে কোন সময় ভুল খাবারে গর্ভবতী মা ও পেটে থাকা শিশু দুজনেরই বিভিন্ন রোগ ও সমস্যা হয়ে যেতে পারে।
কেননা একজন গর্ভবতী মায়ের সুস্থতা থাকাটাই মূল বিষয়।
সেজন্য প্রতিটা গর্ভবতী মাকে নিজের জন্য খাবার গ্রহণ করা ও একইসাথে তার পেটে থাকা ছোট্ট বাচ্চার জন্য তাকে খাবার গ্রহণ করতে হয়।
যতটা সম্ভব গর্ভবতী মায়েদের কে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক খাবার গ্রহণ করা উচিত। তবে আজকের এই আর্টিকেলে আমরা আপনার সাথে আলোচনা করব, গর্ভবতী মূয়েদের কি কি খাবার খাওয়া ক্ষতিকর এবং কি কি খাবার গর্ভবতী মায়েদের জন্য খাওয়া উপকারী।
গর্ভাবস্থায় কী খাবেন আর কী বাদ দেবেন এই বিষয়টি নিয়ে সব নিউ মায়েদের জন্য অনেক চিন্তায় ফেলে দেয়। চলুন জেনে নেওয়া যাক গর্ভবতী মায়েদের কি কি খাবার খাওয়া উচিত।
গর্ভাবস্থায় মায়েদের যেসব খাবার গ্রহণ করতে হবে
গর্ভাবস্থায় যেসব খাবার গুলো আপনার জন্য খুবই প্রয়োজন সেসব খাবারগুলো নিম্নে দেওয়া হল;
ফল ও শাকসবজি
গর্ভাবস্থায় প্রতিটা মায়ের সবচেয়ে যে খাবারটি বেশি খাওয়ার প্রয়োজন সেটা হল ফলমূল ও শাকসবজি। সব সময় দিনে পাঁচ থেকে সাত বার ফলমূল ও শাকসবজি খাওয়ার চেষ্টা করবেন। মানে আপনি যদি 2/3 বার শাক ও সবজী খান তাহলে 3/4 ফল খাবেন।
কেননা শাকিব এবং ফলমূলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন পুষ্টি থাকে। যা গর্ভবতী মা ও শিশু দু’জনেরই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। শাক সবজীর মধ্যে সবসময় চেষ্টা করবেন পালং শাক খাওয়ার।
কেননা পালংশাক গর্ভাবস্থায় কি খেলে বাচ্চা এবং মা দুজনে স্বাস্থ্য ভালো থাকে সেই সাথে বাচ্চা সুস্থ ভাবে বেড়ে ওঠে ও বাচ্ছা সহ মায়ের দাতের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
এছাড়া ফলের ভেতরে খাওয়া যেতে পারে ডালিম বা আনার ফল।
প্রতিটা গর্ভবতী মায়েদের ডালিম এবং পালংশাক সবচেয়ে বেশি খাওয়ার চেষ্টা করা উচিত।
গর্ভাবস্থায় এই দুটি খাবার স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে খুবই উপকারী এবং গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। আর যদি পারেন বিভিন্ন ফলের জুস পান করতে পারেন। এগুলো আপনার শরীরের সুগার ব্লাড এবং সুগার লেভেল বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে।
সেই সাথে গর্ভবতী মায়েদের শরীরের কোন ক্ষতি হলে ক্ষতির সাধন করতে পারবে।
তবে এগুলো অবশ্যই সীমিত পরিমাণে খাবেন কিন্তু ডালিম এবং পালং শাক যতটা পারা যায় দিনে দুই থেকে তিনবার খাবেন। এছাড়াও তাজা ফল ও শাকসবজি স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।
স্টার্চ জাতীয় খাবার
গর্ভাবস্থায় মাকে আলু, ভাত, রুটি ইত্যাদি দানাযুক্ত জাতীয় খাবার তার প্রত্যেক দিনের খাদ্য তালিকায় রাখা যেতে পারে। কেননা এসব খাবারে প্রচুর শর্করা পরিমাণে থাকে।
আর এই সকল জাতীয় খাবার গুলো প্রতিটা গর্ভবতী মায়ের শরীরে এনার্জি উৎপন্ন করে এবং মাকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
যেসব গর্ভবতী মায়েদের ডায়াবেটিস থাকে তাদের ক্ষেত্রে এসব খাবারগুলো খুবই উপকারে আসে।
চাইলে প্রতিদিন সকালে ও দুপুরে এসব খাবার গুলো দেয়া যেতে পারে। সেই সাথে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় এই জাতীয় খাবার গুলো মায়ের জন্য রাখা যেতে পারে।
প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার
হবু মায়েদের গর্ভাবস্থায় মাছ, মুরগীর মাংস, ডিম, ডাল, মটর শুটি মসুরের ডাল ইত্যাদি প্রোটিনযুক্ত খাবার খেতে হবে।
তবে সবসময় খেয়াল রাখবেন সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার মাছ খেতে দিবেন এবং সপ্তাহে দুইবার মুরগীর মাংস খেতে দিবেন।
আর হ্যাঁ প্রতিবারই মুরগীর মাংস খাওয়ার ক্ষেত্রে খেয়াল রাখবেন যেন মাংসে তৈল বা চর্বি না থাকে।
কেননা এই তৈল ও চর্বি জাতীয় খাবার মায়েদের শরীফের সাথে খুব একটা মানানসই নয়।
এসব খাবারের মধ্যে কোন সপ্তাহে একদিন বা দুইদিন মাংস খেতে দেওয়া যেতে পারে। তবে সবসময় মনে রাখবেন অতিরিক্ত খাওয়া যাবে না। এগুলো একটু সাবধানে কম কম খেতে হবে।
তবে এসব খাবার গুলো খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা গর্ভবতী থাকলে মায়েদের প্রচুর পরিমানে প্রোটিন এর ঘাটতি দেখা দিতে পারে। আর এসব খাবারে প্রচুর পরিমানে প্রোটিন থাকে, এ খাবার গুলো খুবই উপকারী।
এছাড়াও এসব খাবারগুলো গর্ভবস্থায় মগর্ভস্থ শিশুর মাথার নতুন টিস্যু তৈরি করতে খুবই সাহায্য করে। পেটে বাড়ন্ত অবস্থায় তার প্রয়োজনীয় পুষ্টি নতুন টিস্যু তৈরি করতে খেতে এসব খাবার গর্ভবতী মাকে খেতে পারেন।
দুগ্ধজাত খাবার
গর্ভাবস্থায় মাকে প্রতি সপ্তাহে দুই এক বার অল্প অল্প করে বা সামান্য পরিমাণ দুধ বা পনির ইত্যাদি জাতীয় খাবার গুলো দিতে পারেন।
কেননা এসব খাবারে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে যা মা ও শিশুর জন্য খুবই উপকারী। তবে সব সময় এসব খাবার গুলো ভিতর একটু কম থাকে। ফ্যাট জাতীয় খাবার শিশুর মস্তিষ্ক গঠনে খুবই উপকারী। গর্ভস্থ শিশুর জন্য খুবই একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি ভিটামিন।
যে কারণে প্রতি সপ্তাহে অল্প অল্প করে সঠিক পরিমাণে মাকে দুগ্ধজাত খাবার দিতে পারেন।
এছাড়াও অনেক গর্ভবতী মায়েদের শরীরে আয়োডিনের ঘাটতি থাকে যা এসব দুগ্ধজাতীয় খাবার গুলো খেলে পূরণ হয়ে যায়।
দুধ ও দুগ্ধজাত খাবারে আয়োডিন ও প্রচুর পরিমাণে খনিজ উপাদান থাকে যা শিশুর মস্তিষ্ক গঠনের জন্য একমাত্র উপাদান।
কেননা গর্ভাবস্থায় প্রতিটা মায়ের শরীর অনেক বেশি কাজ করে থাকে। যেখানে তাকে বেশি বেশি খাবার দেওয়ার প্রয়োজন হয়।
তবে সব সময় এক থেকে তিন মাস পর্যন্ত গর্ভবতী মায়েদের তেমন একটা বাড়তি ক্যালরি প্রয়োজন না।
হলেও পরবর্তীতে আস্তে আস্তে তাদের শরীরের বিভিন্ন উপকরণের প্রয়োজন পড়ে এছাড়াও চাইলে যখনই গর্ভবতী মহিলার তো থাকবেই বা খিদে পাবে তখন এইসব খাবারগুলো খেতে পারে বা গ্রহণ করতে পারে।
গর্ভাবস্থায় মায়েদের যেসব খাবার দেওয়া যাবে না
গর্ভাবস্থায় মায়েদের খাবারের তালিকায় যেসব খাবার গুলো একদমই রাখবেন না সেসব খাবারগুলো নিম্নে তুলে ধরা হলো;
ডিম
গর্ভাবস্থায় কখনোই মাকে কাঁচা ডিম খাওয়ানো যাবে না বা কখনো কাচা ডিম খাওয়াবেন না।
কেননা অনেক মায়েদের ই কাঁচা ডিম খাওয়ার অভ্যাস থাকে। কিন্তু ডিম একটি পুষ্টিকর খাবার হলেও মায়েদের জন্য এটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ বিশেষ করে কাঁচা ডিম।
কাঁচা ডিম বাদে গর্ভাবস্থায় মায়ের খাবার তালিকায় সেদ্ধ ডিম রাখা যেতে পারে। কিন্তু কখনোই গর্ভাবস্থায় মায়েদের কে একদম ই কাঁচা দেওয়া যাবে না। কাঁচা ডিমে সালমোনেলা নামক একটি ব্যাকটেরিয়া থাকে যদি ডিম ভালোভাবে সেদ্ধ না করা হয় তাহলে গর্ভবতী মায়েদের বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি করে।
এছাড়াও আরও কয়েকটি খাবার মায়েদের খাবার তালিকায় রাখা যাবে না। যেমন অর্ধসিদ্ধ মাংস, কলিজা ও কলিজা তৈরি খাবার, পাস্তুরিত তরল দুধ ইত্যাদি।
এসব খাবার গুলো কখনোই মায়েদের খাবার তালিকায় রাখা যাবে না। কেননা এসব খাবারগুলো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ এছাড়াও অর্ধসিদ্ধ মাংসে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া থাকে যা গর্ভবতী মায়েদের জন্য খুবই ঝুঁকি পূর্ণ।
এছাড়াও কাঁচা মাংস বা অর্ধসেদ্ধ মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। ভালোভাবে সেদ্ধ করা যায় তাহলে অবশ্যই মাংস খাওয়া যাবে। কিন্তু কখনো অর্ধসেদ্ধ মাংস খাওয়া যাবে না। মায়েদেরকে কলিজাও খাওয়ানো যাবে না।
কেননা কলিজা খাওয়ানোর কারণে গর্ভে থাকা বাচ্চাটির বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। তা ছাড়া কখনই পাস্তুরিত তরল দুধ কাঁচা দুধ খাওয়ানো যাবে না। কেননা কাঁচা দুধে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া থাকে।
যেটা ভালো না ফোটানো হয় তাহলে সেই দুধের খাবার খেয়ে মায়ের বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে।
উপরে দেওয়া প্রত্যেকটা খাবারের তালিকা অনুযায়ী যেসব খাবারগুলো খেতে মানা করা বা নিষেধ করা হয়েছে ওইসব খাবার গুলো একদমই খাওয়া যাবে না।
এইসব খাবারগুলো গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা রাখলে গর্ভবতী মায়েদের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে।
আর যদি কখনো ভুলে এইসব খাবারগুলো মায়েদের খাবার তালিকায় রেখে ফেলেন তাহলে অবশ্যই খুব তাড়াতাড়ি নিকটস্থ ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
কাঁচা পেঁপে বা পাকা পেঁপে
আপনি বা আপনার আত্মীয় স্বজনের মধ্যে যদি কেউ গর্ভবতী হয় তাহলে সবসময় খেয়াল রাখবেন কোনভাবেই যেন সে কাঁচা পেঁপে, পাকা পেঁপে বা অর্ধ কাঁচা পেঁপে কিছুতেই না খায়।
কেননা পাকা পেঁপে খাওয়ার ফলে অনেক সময় গর্ভপাতের মতো দুর্ঘটনা ঘটে। এজন্য গর্ভাবস্থায় থাকা অবস্থায় কেউ কখনই তাকে কাঁচা পেঁপে বা আধা পাকা পেঁপে খাওয়াবেন না। গর্ভবতী মায়েদের খাবার তালিকা থেকে সবসময় পেঁপে দূরে রাখাই শ্রেয়।
ক্যাফেইন
প্রতিটা ডাক্তারই কমবেশি গর্ভাবস্থায় মায়েদের কে কফি বা ক্যাফেইন জাতীয় খাবার থেকে দূরে থাকতে বলে থাকে।
যেমন অনেকের অভ্যাস থাকে সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে এক কাপ চা অথবা এক কাপ কফি খাওয়ার বা কফি গ্রহণ করেন।
কিন্তু খেয়াল রাখবেন আপনি যে প্রতিদিন যে পরিমাণ ক্যাফেইন জাতীয় জিনিস গ্রহণ করেছেন তার পরিমাণ যেন 150 গ্রামের বেশি না হয়।
কেননা অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণের ফলে শিশু জন্মের সময় ওজন হতো পারে। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহনের ফলে মিসক্যারেজের মতো দুর্ঘটনা ঘটে।
এই জন্য সবসময় খেয়াল রাখবেন যে অতিরিক্ত ক্যাফেইন গর্ভাবস্থায় গ্রহণ না করা হয়। এবং যদিও গ্রহণ করা হয় তাহলে যেন 150 গ্রাম এর বেশি ক্যাফিন কখনোই গ্রহণ না করা হয়।
সামুদ্রিক মাছ
আমরা জানি সামুদ্রিক মাছেপ্রচুর পরিমাণে খনিজ উপাদান থাকে। কিন্তু সামুদ্রিক মাছ যেমন স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী ঠিক তেমনি অধিক পরিমাণে সামুদ্রিক খাবার খেলে গর্ভের শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের বিভিন্ন ক্ষতি হতে পারে।
কেননা সামুদ্রিক মাছে পারদ জাতীয় এক ধরনের পদার্থ থাকে যা শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি করে। যদিও গর্ভাবস্থায় মায়েদের কে মাছ খাওয়ানো যেতে পারে। তবে অতিরিক্ত কোন সামুদ্রিক মাছ যেন না খাওয়ানো হয় এই দিকটাতে একটু খেয়াল রাখা উচিত। এখন থেকেই গর্ভবতী মায়েদের খাবারের তালিকা থেকে সামুদ্রিক মাছ ফেলে দিন।
গর্ভবতী মায়েদেরকে সব সময় স্বাস্থ্যকর ভেজিটেবল অয়েল গ্রহণের পরামর্শ দেয়া হয়।
কেননা অনেক সময় ভেজাল তেল খাওয়ার ফলে লিভারের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
তাছাড়া ওর দুধু দুধু খাবা সীমিত পরিমাণে গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয় বেশি গ্রহণ করার ফলে সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়াও মায়েদেরকে সব সময় শস্যদানা খাওয়ার প্রতি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।
আর সব সময় ফ্রিজে রাখা সংরক্ষণ করা মাংস না খাওয়ানোই ভালো। কেননা এসব মাংস খাওয়ার ফলে হজম না হলে খুব সমস্যা হয়।
আর অবশ্যই গর্ভবতী মায়েদের খাবার তালিকায় এই দিকটা খেয়াল রাখবেন যে কখনো যেন অতিরিক্ত চিনি পানিযুক্ত খাবার বা জুস জাতীয় খাবার না দেওয়া হয়।
ফলের জুস হলো সেটা চিনিমুক্ত দেওয়া যেতে পারে। আর সবচেয়ে যে জিনিসটা বেশি খাওয়ার প্রয়োজন সেটা হল পানি।
প্রতিটা গর্ভবতী মায়েদেরকে অতিরিক্ত বা বেশী পরিমাণে পানি খাওয়ানো যেতে পারে।
যদি অতিরিক্ত কোনো কিছুই খাওয়ানো ঠিক না কিন্তু বেশি পরিমাণে পানি খাওয়ার গর্ভবতী মায়েদের জন্য খুবই উপকারী।
তাছাড়া এসব খাবারের পাশাপাশি যদি গর্ভবতী মায়েরা যদি নিয়মিত ব্যায়াম করে তাহলে তারা ও তাদের গর্ভে থাকা বাচ্চা সুস্থ থাকবে।
কারণ ব্যায়াম করার পাশাপাশি সে তার নিজের বাচ্চাকে গর্ভধারণ কষ্ট ভুলে যেতে পারে এবং ব্যায়ামে সে নিজেই শক্তিশালী হয়ে ওঠে। অনেক গর্ভবতী মায়েরা আছে যারা খাবার তিন বেলা খেয়ে শুধু ঘুমিয়ে থাকে।
এটা কখনো করা যাবে না নিয়মিত হাঁটাচলা করলে একটু ব্যায়াম করলে শরীর ভালো থাকবে এবং বাচ্চা ও মা দুজনেই সুস্থ থাকবে।
গর্ভাবস্থায় মায়ের চার বেলা খাবারের রুটিন
গর্ভাবস্থায় নারীদের খাবারের তালিকা কেমন হওয়া উচিৎ তা জেনে নিই চলুন।
এখানে আমরা উদাহরণসরূপ কিছু আদর্শ খাবার রুটিনের কথা বলব। তবে আপনার বয়স, শারীরিক অবস্থা, ওজন ইত্যাদি বিবেচনা করে ভাল ডায়েট সাজেশন অবশ্যই আপনার ডাক্তারের কাছ থেকে জেনে নেবেন।
গর্ভাবস্থায় মায়েদের খাবারের তালিকা কেমন হওয়া উচিত বা কিভাবে প্রতিটা দিন প্রতিটা গর্ভবতী মায়েদেরকে খাবার দেয়া হবে তার একটি তালিকা নিচে দেওয়া হল।
এই তালিকা অনুযায়ী আপনি গর্ভবতী মায়েদেরকে যেকোনো খাবার দিতে পারেন।
তো চলুন দেখে নেওয়া যাক গর্ভবতী মায়েদের প্রতিদিন কখন কি কি খাবার গ্রহণ করা উচিত।
সকাল বেলা
গর্ভবতী মায়েদের কে সকাল বেলা হালকা চা ও বিস্কুট দেওয়া যেতে পারে।
কেননা সকাল বেলা চা ও বিস্কুট খাওয়ার ফলে মায়েদের শরীরে যে বমি বমি ভাব ও দুর্বল দুর্বল ভাব থাকে তখন চা ও বিস্কুট খাওয়ার ফলে মায়ের শরীর চাঙ্গা থাকবে এবং তার সারাদিন চলা ফেরা করতে ভালো লাগবে।
চা ও বিস্কুট খাওয়ার 30 মিনিট থেকে 1 ঘন্টা পরে দুই থেকে তিনটি আটার রুটি এবং সবজি ভাজি খেতে পারেন। অবশ্যই খাওয়ার পরে বেশি বেশি করে পানি পান করবেন।
এরপর এ বেলা দশটা এগারোটার দিকে যদি পারা যায় ননী ছাড়া এক গ্লাস দুধ ও একগ্লাস ফলের জুস খেতে পারেন।
অবশ্যই যদি পারেন, একদিন পরপর ফলের জুস ও দুধ খাবেন। যেমন আজকে যদি দুধ খান তাহলে পরের দিন ফলের জুস খাবেন।
এরপর দুপুরের খাবার না খাওয়া পর্যন্ত মধ্যখানে বাদাম বা বাদাম জাতীয় যেকোনো কিছু খেতে পারেন।
দুপুর বেলা
দুপুর বেলা খাবার আগে অবশ্যই ভালোভাবে গোসল করে নিবেন। গোসল করার পরে খাবার গ্রহণ করাই সর্বোত্তম। দুপুরে চাইলে লাল চালের ভাত এর সাথে মাছ অথবা মাংস খেতে পারেন।
অবশ্যই মাছ বা মাংসের পাশাপাশি শাক সবজি ও তরী তরকারি খেতে পারেন। সেইসাথে নিত্যদিনের নিয়মিত খাবার ডাল ও খেতে পারেন।
তো দুপুরের খাবার খাওয়া দাওয়া শেষ করে পাঁচ মিনিট একটু বিরতি নিবেন। বিরতি নেওয়ার পর চাইলে দই খেতে পারেন। অনেক গর্ভবতী মায়েরা দুপুরের খাবারের পর সাধারণত কাঁচা চাল চিবিয়ে খেয়ে থাকে। অবশ্যই এই কাজটি করবেন না কখনোই চাল চিবানো যাবে না।
এইতো গেল দুপুরের খাবার এভাবে প্রতিদিন দুপুরে যতটা পারা যায় খাবার খাবেন। অবশ্যই খাবার খাওয়ার পর বেশি বেশি করে পানি পান করবেন।
বিকাল বেলা
অনেক গর্ভবতী মায়েরা বিকাল বেলা বিভিন্ন ধরনের তেলে ভাজা পোড়া খাবার খেয়ে থাকে।
অবশ্য এসব খাবার গুলো গর্ভবতী মায়েদের জন্য খুবই ক্ষতিকর। কখনোই এসব খাবারগুলো খাবেন না সবসময় ভাজাপোড়া খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।
যদি পারা যায় বিকাল বেলায় বাদাম ভাজা অথবা মটরশুটি সেদ্ধ করে খেতে পারেন। এর পাশাপাশি কিছুক্ষণ পর পর বাসায় তৈরী নিরাপদ কেক ও বিভিন্ন ফল খেতে পারেন।
আর যদি পারা যায় এক গ্লাস ফলের জুস ও খেয়ে নিতে পারে। কিন্তু কখনো ভাজা পোড়া জাতীয় কোন খাবার, বেশির ভাগ করে এই গর্ভবতী সময়ে গ্রহণ করবেন না।
রাতের বেলা
রাতে চাইলে গরম ভাত খেতে পারেন আর যদি গরম না থাকে তাহলে দুপুরের ভাত ও খেতে পারেন। সেই সাথে বিভিন্ন রকমের ছোট মাছ অথবা মাংস খেতে পারেন। এসময় খাবারের সাথে বিভিন্ন রকমের সালাত ও তরিতরকারি রাখা যেতে পারে।
কিন্তু রাত্রিবেলা শাক না খেলেও চলবে। কেননা অনেক সময় রাতে শাক খাওয়ার পরে সেই শাক পেটে গিয়ে সহজে হজম হয় না যেটা গর্ভবতী মায়েদের একটু বিপাকে ফেলে বলা যায়।
যদি পারা যায় ঘুমানোর আগে এক গ্লাস ননী ছাড়া দুধ অথবা একগ্লাস ফলের জুস খেয়ে ঘুমিয়ে পড়বেন।
তো উপরে আমরা গর্ভবতী মায়েদের চার বেলা খাবারের তালিকা দিয়েছি। গর্ভাবস্থায় মায়েদের খাবারের তালিকা উপরের মত হওয়া যেতে পারে।
কিন্তু তবু ও সব সময় চেষ্টা করবেন ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী যেকোনো খাবার গ্রহণ করার।
কেননা সব গর্ভবতী মায়েরা তো আর এক নয়। অনেক গর্ভবতী মায়োদের বিভিন্ন রকমের ডায়াবেটিসের সমস্যা থাকে, উক্ত রক্তচাপ এবং নিম্ন রক্তচাপ থাকে।
তাদের ক্ষেত্রে এই খাবারের তালিকা টা আলাদা আলাদা হয়ে থাকে। তো যতটা পারা যায় ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী বিভিন্ন বেলায় খাবার গ্রহণ করা যেতে পারে।
শেষকথা
গর্ভাবস্থায় মায়েদের খাবার তালিকায় অনেক খাবার রয়েছে যেসব খাবার খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আবার কিছু কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো গ্রহণ করা খুবই গর্ভাবস্থায় মা ও শিশুদের জন্য ক্ষতিকারক ও ঝুকিপূর্ণ।
আমরা আজকে আর্টিকেলে গর্ভবতী মায়েদের খাবার তালিকা ও কি কি খাবার গ্রহণ করা যাবে না এইসব বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেছি।
কি কি খাবার মায়েদের খাদ্য তালিকায় রাখা ভাল আর কি খাবার মায়ের গ্রহণ করা ঠিক না এসব বিষয়গুলো নিয়ে আশা করি আপনারা বুঝতে পারছেন।
আপনার কোনো আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধব বা অন্য কেউ গর্ভবতী হয়ে থাকে তাহলে তাদের সাথে এই আর্টিকেলটি শেয়ার করতে পারেন। তারা জানতে পারবে যে তাদের কি কি খাওয়া উচিত কি খাওয়া উচিত নয়।
তারা বুঝতে পারবে গর্ভবতী মায়েদের খাবার তালিকা কি কি খাবার রাখা নিরাপদ আর কি কি খাবার রাখা অনিরাপদ।
গর্ভবতী মায়েদের খাবারের তালিকা কি কি খাবে কি কি খাবে না এই নিয়ে আজকের মতো এ পর্যন্তই ছিল আমাদের আর্টিকেল।
দেখা হবে আবার নতুন কোন আর্টিকেলে নতুন কোন বিষয় নিয়ে ততক্ষণ সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।