পাইলস এর লক্ষণ, চিকিৎসা ঔষধের নাম এবং কোথায় চিকিৎসা করলে ভালো হবে চিকিৎসা খরচ কত এগুলো বিষয়ে অনেকে জানতে চেয়ে থাকেন তাই আজকে আপনাদেরকে এগুলো বিষয়ে জানানো হবে। পাইলস এমন একটি সমস্যা যা একজন মানুষকে অনেক পরিমাণ কষ্ট দিয়ে থাকে।
আর এই সমস্যাটি এমন জায়গায় হয় সেজন্য মানুষ সহজে কাউকে বলতে পারেনা বা বলতে সংকোচ বোধ করে। পায়ুপথের সঠিক যত্ন না নেওয়ার কারণে এ সমস্যাটি অনেক মানুষের হয়ে থাকে। তো চলুন জেনে নেওয়া যাক এই বিষয় বিষয়ে।
পাইলস এর লক্ষণ
পাইলস একটি বিব্রতকর রোগ বিভিন্ন রকম অস্বাস্থ্যকর বা আরো অনেক কারণে এই রোগটি হয়ে থাকে। এই রোগের বেশ কিছু লক্ষণ রয়েছে সেই সাধারণ লক্ষণগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো:
মলদ্বারের চারপাশে শক্ত মাংসপিণ্ড
যদি কারো পাইলস হয় মলদ্বারের চারপাশে ছোট্ট একটি মাংসপিণ্ডের মত হয়ে দেখা যায়। এটা মূলত পাইলসের প্রধান লক্ষণ। তবে এটি বিভিন্ন জনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন আকারের হতে পারে।
মলত্যাগ করতে গিয়ে রক্তপাত
পাইলসের আরো একটি অন্যতম লক্ষণ হল মলত্যাগ করার সময় রক্তপাত হওয়া অর্থাৎ মলত্যাগের রাস্তা দিয়ে রক্ত বের হওয়া। অন্য লক্ষণ না দেখা দিলে এই লক্ষণটি অবশ্যই দেখা দিবে আর এটি যদি নিয়মিত হতে থাকে বুঝতে হবে যে এটি পাইলসের কারণে হচ্ছে।
ব্যথা ও চুলকানি
পাইলসের আরো একটি অন্যতম লক্ষণ হল মলদ্বারের আশেপাশে প্রচন্ড পরিমাণ ব্যথা হওয়া এবং সেই সাথে অস্বস্তি করে চুলকানি হওয়া। এরকম সমস্যা নিয়মিত হতে থাকলে অবশ্যই বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখতে হবে।
প্রচন্ড জ্বালা করা
যদি পাইলসের সমস্যা হয় তাহলে আরো একটি লক্ষণ দেখে বোঝা যেতে পারে সেটা হল মলদ্বারে প্রচন্ড পরিমাণ জ্বালাপোড়া করা। টয়লেটে গেলে একদম অস্বস্তিকর অবস্থা হয়ে যাওয়া।
আরো পড়ুন: ইউরিন ইনফেকশনের কারণ, লক্ষণ ও ঔষধের নাম ২০২৫
এছাড়াও পাইলসের আরো সাধারণ অনেক লক্ষণ রয়েছে যেমন মলদ্বারের আশেপাশে ফুলে যাওয়া। আবার অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায় মলদ্বার দিয়ে মিসকাও বা শ্লেষ্মা স্রাব বের হওয়া। এই লক্ষণ গুলো দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যাওয়া প্রয়োজন এবং পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া প্রয়োজন।
পাইলস এর চিকিৎসা ঔষধের নাম
অনেকে জানতে চেয়ে থাকেন পাইলস এর চিকিৎসা ঔষধের নাম। আসলে যে কোন রোগ বা যে কোন অসুখ হলে প্রথমে ওষুধ খাওয়ার আগে একজন অভিজ্ঞ ভালো চিকিৎসকের কাছে গিয়ে সেই অসুখ সম্পর্কে বিস্তারিত বলা এবং পরীক্ষা নিরীক্ষা করার মাধ্যমে ওষুধ নির্বাচন করা উচিত।
তারপরেও আপনারা যেহেতু অনলাইনে এ বিষয়ে জানতে চেয়ে সার্চ করে থাকেন কিন্তু সঠিক তথ্য পান না তাদের জন্য পাইলসের কয়েকটি ওষুধের নাম বলবো যেগুলো বেশ উপকারী বা কার্যকরী। ঔষধ গুলোর নাম হলো:
- হেমোরিফ ৪৫০ মিলিগ্রাম ট্যাবলেট
- ড্যাফলন ৫০০ মিলিগ্রাম ট্যাবলেট
- পাইলস্টপ ৫০০ মিলিগ্রাম ট্যাবলেট
- অ্যালভেনর ৫০০ মিলিগ্রাম ট্যাবলেট
- নরমানাল ৫০০ মিলিগ্রাম ট্যাবলেট
পাইলসের সমস্যার সমাধানে এই ঔষধ গুলো বেশ কার্যকরী তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সেবন করতে হবে। কখনোই অনলাইনে কোন ওষুধের নাম দেখে সেটা নিজ থেকে কিনে সেবন করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
পাইলস এর মলম নাম
পাইলসের সমস্যা হলে অনেক জ্বালাপোড়া করে থাকে সেটা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য অনেকে পাইলস এর মলম নাম জানতে চেয়ে থাকেন। পাইলস এর সমস্যার সমাধানে যেগুলো মলম ব্যবহার করা হয় সেগুলোর নাম নিচে দেওয়া হলো:
- আনুস্ট্যাট মলম
- রেকটো কেয়ার মলম
- ডিকটামানি ক্রিম
- এরিয়ার অয়েন্টমেন্ট
পাইলস রোগী এগুলো মলম ব্যবহার করা হয়ে থাকে তবে এই মলম গুলো চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করতে হবে। সঠিক নিয়মে ব্যবহার করলে হয়তো খুব ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে। তবে এগুলো যেহেতু সেনসিটিভ বিষয় তাই নিজ থেকে কোন কিছুই করবেন না।
অপারেশন ছাড়া পাইলস এর চিকিৎসা
পাইলসের সমস্যা যদি প্রথম পর্যায়ে থাকে তাহলে অপারেশন করার প্রয়োজন হয় না অপারেশন ছাড়াই কিছু চিকিৎসা রয়েছে যেগুলোর মাধ্যমে ভালো করা যায়।
তবে প্রথমে জানতে হবে সমস্যাটি কি অবস্থায় রয়েছে অর্থাৎ এটি শুধুমাত্র চিকিৎসা দিয়ে ভালো হবে নাকি অপারেশন করতে হবে। অপারেশন শুধুমাত্র শেষ অবলম্বনে হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তো অপারেশন ছাড়া যেভাবে পাইলসের চিকিৎসা করা যেতে পারে।
প্রথম চিকিৎসা: পাইলসের প্রথম অবস্থায় শুধুমাত্র যদি মলদ্বার দিয়ে রক্ত যায় তাহলে কিছু ঔষধ রয়েছে সেগুলো দেওয়া হয়ে থাকে এবং খাদ্যাভাসের কিছু পরিবর্তন বা জীবন যাপনের কিছু পরিবর্তন দেওয়া হয়ে থাকে এগুলোর মাধ্যমে ভালো হয়ে যেতে পারে।
দ্বিতীয় চিকিৎসা: কোন ধরনের অপারেশন ছাড়াই লেজার পদ্ধতি রয়েছে সেটার মাধ্যমে খুব সহজেই পাইলসের চিকিৎসা করা হয়ে থাকে। যদিও এটা অপারেশন নয় তবে এই চিকিৎসা শুধুমাত্র চিকিৎসকের মাধ্যমে করাতে হবে। এই চিকিৎসা করতে গিয়ে কোন ধরনের রক্তপাত ছাড়াই ভালো করা যায়।
আরো পড়ুন: গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ ও গর্ভবতী মায়ের আমল
তৃতীয় চিকিৎসা: পাইলস হলে মলদ্বারের বাইরে বা আশেপাশে একটি মাংসপিন্ডের মতো দেখা যায় বা হয়ে থাকে। তো এটি অপারেশনের মাধ্যমে ভালো করার জন্য রাবার ব্র্যান্ড রিং এর মাধ্যমে চিকিৎসা দিলে। পাঁচ থেকে ছয় দিনের মধ্যে সেই পাইলসের মাংসপিণ্ড খুলে পড়ে যায়।
তাহলে আশা করছি বুঝতে পারছেন অপারেশন ছাড়াই পাইলস এর সমস্যা ভালো করা সম্ভব তবে সেটা যদি শেষ পর্যায়ে অর্থাৎ অনেক বেশি হয়ে যায় তাহলে অপারেশন করতেই হবে। আর প্রথম পর্যায়ে থাকলে অপারেশন ছাড়াই ভালো করা যাবে।
পাইলস এর চিকিৎসা কোথায় ভালো হয়
পাইলসের চিকিৎসা কোথায় ভালো হয় এটা অনেকে প্রশ্ন করে থাকেন আসলে পাইলস এমন একটি রোগ যেটা অনেক বেশি অস্বস্তিকর এবং যন্ত্রণাদায়ক। যদি এটার সঠিক চিকিৎসার না নেওয়া হয় তাহলে আস্তে আস্তে মারাত্মক হতে পারে।
সেজন্য পাইলসের সমস্যা হলে একজন অভিজ্ঞ কলোরেকটাল সার্জন কে দেখাতে হবে এবং সঠিক চিকিৎসা নিতে হবে। পাইলস রোগের ভালো চিকিৎসার জন্য ঢাকার বেশ কিছু হাসপাতালে ডাক্তার রয়েছে তাদের কাছে যেতে পারেন।
যেমন ডাক্তার ডাঃ শানজীদাহ্ হক এবং ডাঃ মোহাম্মদ আনিসুর রহমান এদের কাছে যেতে পারেন এদের ঠিকানা হলো।
ডাঃ শানজীদাহ্ হক – বাড়ি ২৪, রোড ৮, ব্লক এ, বকশীগঞ্জ টাওয়ার মিরপুর ১২ বাস স্ট্যান্ড। শুধুমাত্র শুক্রবার ব্যতীত প্রতিদিন সকাল ১০ টা হতে সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত রোগী দেখা হয়।
ডাঃ মোঃ আনিসুর রহমান – বাড়ি ২৪, রোড ৮, ব্লক এ, বকশীগঞ্জ টাওয়ার মিরপুর ১২ বাস স্ট্যান্ড, সাউথ পয়েন্ট স্কুলের দক্ষিণ পাশে। সিরিয়ালের জন্য কল করতে পারেন ০১৭৪০-৪৮৬১২৩ এই নাম্বারে।
পাইলস এর চিকিৎসা খরচ
পাইলসের চিকিৎসা খরচ নির্দিষ্ট ভাবে বলা সম্ভব নয় কারণ আপনার সমস্যার উপর নির্ভর করে এবং বিভিন্ন হাসপাতাল এবং চিকিৎসকের উপর নির্ভর করে খরচ নির্ধারণ হবে।
তবে যদি ঢাকার যে কোন হাসপাতালে পাইলসের অপারেশন করা হয় তাহলে আনুমানিক ২০ হাজার টাকা থেকে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লাগতে পারে।
আরো পড়ুন: থাইরয়েড লক্ষণ কি ? থাইরয়েড কমানোর উপায় জেনে নিন
আর যদি অপারেশন ছাড়া চিকিৎসা করা হয় তাহলে খরচ কিছুটা কম লাগতে পারে। কত খরচ লাগবে সেটা জানার জন্য যেখানে চিকিৎসা করবেন সেখানে আগে তাদের সাথে যোগাযোগ করে জেনে নিতে পারেন।
আমাদের শেষ কথা
পায়ুপথের অসংখ্য রোগের মধ্যে এটি অন্যতম একটি যা খুবই খারাপ। আপনার যদি এ রোগ হয়ে থাকে তাহলে কোন ধরনের সংকোচ বোধ ছাড়াই চিকিৎসকের কাছে যাবেন এবং বিস্তারিত আলোচনা করবেন। তারপরে সঠিক চিকিৎসা নিতে হবে তাহলে এই রোগটি ভালো করতে পারবেন।
যদি লজ্জায় অবহেলা করেন তাহলে পরবর্তীতে অনেক ভুগতে হবে। আশা করছি আজকের পোস্টে উল্লেখিত তথ্য গুলো আপনাদের কিছুটা হলেও উপকারে আসবে। সব সময় নিজের যত্ন নিবেন এবং ভালো থাকবেন। আর আপনাদের কোন প্রশ্ন থাকলে আমাদেরকে জানাতে পারেন।