জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করার নিয়ম ২০২২ (নতুন জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন)

একটি দেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের সবারই জন্ম নিবন্ধন থাকা বাধ্যতামূলক। যখন একটি নতুন শিশু জন্মগ্রহণ করে তখন তার জন্ম নিবন্ধন তৈরি বাধ্যতামূলক হয়ে পড়ে। কেননা ঐ বাচ্চাটির জন্মের পর তার বিভিন্ন কাজে জন্ম নিবন্ধন এর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

জন্মের পরে বাচ্চাটিকে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কাজে তার জন্ম নন্দন পত্রের দরকার হয় যেমন তাকিয়ে স্কুলে যদি নতুন ভর্তি করাতে যাওয়া হলে তাহলে স্কুল কতৃপক্ষ জন্ম নিবন্ধন চাইবে।

কেননা একটি শিশু জন্মের পরে জন্ম নিবন্ধন তার নাগরিক সনদ হিসেবে তুলনা করা যেতে পারে। সে যখন বড় হবে তখন এই জন্ম নিবন্ধন এই তাকে আর বিভিন্ন কাগজ তৈরিতে সহায়তা করবে। যখন তার ১৮ বছর পূর্ণ হবে তখন তার এনআইডি কার্ড বানাতে হবে তখন তার এই জন্ম নিবন্ধন এর প্রয়োজন রয়েছে।

এরপরে স্কুল মূল পরীক্ষা দিবে তখন তার এই জন্ম নিবন্ধন এর প্রয়োজন পড়বে। কেননা জন্ম নিবন্ধন ছাড়া সে কখনো প্রমাণিত হবে না যে সে উক্ত দেশের নাগরিক।

তো আজকের এই নিবন্ধনে আমরা জানতে চলেছি জন্ম নিবন্ধন সনদ কি? জন্ম নিবন্ধন সনদ বানাতে কি কি প্রয়োজন পড়তে পারে? জন্ম নিবন্ধন সনদ কিভাবে ডাউনলোড করতে হয়? এইসব বিষয় নিয়ে আর দেরি না করে মূল বিষয়টি জেনে নেওয়া যাক।

জন্ম নিবন্ধন কি?

প্রতিটি শিশুর জন্মের পরেই সে যে দেশে জন্মগ্রহণ করবে সে ওই দেশের নাগরিক হিসেবে তার জন্ম নিবন্ধন তৈরি করতে হবে। কেননা ওই দেশের নাগরিক এটা তার জন্ম নিবন্ধনে প্রমাণ হিসেবে রইবে।

একটি শিশু যেই দেশে যখন ই জন্ম গ্রহণ করুক সে তখন ই সেই দেশের নাগরিক হিসেবে গন্য হবে। আর তার এই নাগরিকতাকে কাগজের রূপ দেওয়ার জন্য জন্ম নিবন্ধন তৈরি করা বাধ্যতামূলক।

কেননা সে যে একটি দেশের জন্মগ্রহণকারী নাগরিক তার প্রমাণ এই জন্ম নিবন্ধন। জন্ম নিবন্ধন এর মাধ্যমে সরকারের কাছে নথিভূক্ত থাকে যে সে ওই দেশে জন্মগ্রহণকারী একজন নাগরিক।

জন্ম নিবন্ধন এর নাগরিকের একটি জন্ম নিবন্ধন নম্বর থাকে সেটা সরকারের কাছে তথ্য যুক্ত থাকে যে সে একটি দেশের জন্মগ্রহণকারী কোন নাগরিক

তাছাড়া সে ওই দেশের স্থায়ীভাবে থাকার জন্য ও বিভিন্ন ধরনের সাহায্য সহযোগিতা পাওয়ার জন্য তার জন্ম নিবন্ধন এর প্রয়োজন রয়েছে।

যখন কোন প্রয়োজনীয় কাজে সে সরকারি কোনো সেবা গ্রহণ করতে যাবে তখন যদি সরকার জানতে পারে যে সে এই দেশের নাগরিক না। তাহলে কিন্তু তাকে কোন ধরনের সেবা প্রদান করবে না কেননা এটি দেশ তাদের জনগণের জন্যই শুধু সেবা প্রদান করে থাকে।

এজন্য সে যদি উক্ত দেশের জনগণ হয় তাহলে সে আইন অনুযায়ী ও তার অধিকার অনুযায়ী বিভিন্ন সরকারি সেবাগুলো পাবে। আর তারই প্রমাণ হিসেবে তা থাকবে একটি জন্ম নিবন্ধন পত্র।

জন্ম নিবন্ধন কেন প্রয়োজন?

একটি নাগরিকতার বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কাগজ তৈরি এবং বিভিন্ন সেবা পাওয়ার জন্য তার জন্ম নিবন্ধন এর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে

সে যেই দেশের নাগরিক হবে সে সেই দেশেরই বিভিন্ন সেবা গ্রহণ করতে পারবে।
যখন একটি শিশু জন্মগ্রহণ করে তখন সরকার জানতে পারে না যে তার দেশে আরেকটি নতুন নাগরিকের জন্ম হয়েছে।

তখন সরকার জন্ম নিবন্ধনের মাধ্যমে উক্ত লোকটিকে একটি জন্ম নিবন্ধন নম্বর দেয়ার মাধ্যমে তাকে ওই দেশের একজন নাগরিক হিসেবে দেখা হয়।

জন্ম নিবন্ধন কিভাবে বানাবেন?

জন্ম নিবন্ধন বানাতে হলে আপনার নিকটস্থ ইউপি কেন্দ্রে গিয়ে খুব সহজেই জন্ম নিবন্ধন বানাতে পারবেন।

এছাড়াও চাইলে ঘরে বসে অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করে আবেদন পত্র টি ডাউনলোড করে ইউপি কেন্দ্রে জমা দিয়েও আপনার শিশু অথবা যে কারো জন্ম নিবন্ধন বানাতে ও ভুল তথ্য সংশোধন করতে পারবেন।

জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করার নিয়ম

বর্তমানে ঘরে বসেই জন্ম নিবন্ধন বানানো যায়। যদিও অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সনদ বানাতে হলে ও ইউপি কেন্দ্রে যেতে হবে।

আপনি চাইলে ঘরে বসে অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করে আবেদন পত্র টি ডাউনলোড করে ইউপি কেন্দ্রে জমা দিয়েও আপনার শিশু অথবা যে কারো জন্ম নিবন্ধন বানাতে ও ভুল তথ্য সংশোধন করতে পারবেন।

জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করার নিয়ম হলো;

প্রথমে ক্লিক করুন ওয়েবসাইট এ গিয়ে সকল তথ্য সঠিক ভাবে পূরন করতে হবে। এর পরে সব তথ্য পূরন শেষ করে অনলাইন থেকে আবেদন পত্রটি ডাউনলোড করতে হবে।

ডাউনলোড করার পরে জন্ম নিবন্ধন আবেদন পত্রটি প্রিন্ট করতে হবে। প্রিন্ট করার পরে সেই আবেদন পত্রটি নিয়ে যেতে হবে ইউপি কেন্দ্রে। ইউপি কেন্দ্রে গিয়ে স্থানীয় সচিব এর সীল ও সাক্ষর লাগবে।

তারপরে ইউপি সদস্য ও ইউপি চেয়ারম্যান এর সীল ও সাক্ষর দিতে হবে। তারপরে সচিব আপনার জন্ম নিবন্ধন এর সকল তথ্য যাচাই করবে। সব কিছু ঠিক থাকলে এরপরে আপনাকে জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রদান করবে।

এছাড়াও অনেক এর জন্ম নিবন্ধন সনদ হারিয়ে চেয়ে থাকি তো আপনার যদি জন্ম নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গিয়ে ও থাকে তাহলে আপনি সেটা আবার তুলে আনতে পারবেন।
তবে অবশ্যই ক্ষেত্রে আপনাকে ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকার মত জরিমানাও গুনতে হতে পারে।

তবে আপনার যদি অনেক আগের জন্ম নিবন্ধন সনদ থাকে তাহলে আজ এই নিকটস্থ কেন্দ্রে গিয়ে ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন বানিয়ে ফেলুন।

কেননা আগের জন্ম নিবন্ধন গুলো ম্যানুয়ালি তৈরি করা হতো কিন্তু বর্তমানে ডিজিটাল যুগে প্রতিটা জন্ম নিবন্ধন সনদ অনলাইনের মাধ্যমে করা হয়ে থাকে।

আর আপনার যদি জন্ম সনদ অনলাইন এর মাধ্যমে করা হয়ে থাকে তাহলে আপনার কোন সমস্যা নেই।

আপনার জন্ম সনদ ডিজিটালাইজড করা থাকলে যদি কখনো জন্ম সনদ হারিয়ে গিয়ে থাকে তাহলে শুধু জন্ম নিবন্ধন নম্বর টা বললেই খুব সহজে আপনাকে নতুন একটি জন্ম নিবন্ধন সনদ ডাউনলোড করে দিবে।

আর যদি আপনার পুরনো জন্ম নিবন্ধন সনদ থাকে তাহলে উক্ত নিয়ে গিয়ে ডিজিটালাই করে নিয়ে আসতে পারবেন।

জন্ম নিবন্ধন বানাতে কত টাকা প্রয়োজন?

আপনি যার জন্ম নিবন্ধন বানাবেন সে যদি বাংলাদেশী হয়ে থাকে আর তারপর যদি থাকে ৪৫ দিনের মধ্যে তাহলে আপনি বিনামূল্যে কেন্দ্রে গিয়ে জন্ম নিবন্ধন সনদ বানাতে পারবেন।

এর জন্য যদি তৃতীয় পক্ষ বা কেউ আপনার কাছে কোন প্রকার টাকা দাবি করে তাহলে অবশ্যই ভিডিও ধারণ করে যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিন অথবা নিকটস্থ কেন্দ্র অভিযোগ করে বিষয়টি জানান।

নতুন জন্ম নিবন্ধনের জন্য বাচ্চার বয়স যদি শূন্য থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে থাকে তাহলে তার জন্য কোন টাকা ছাড়াই জন্ম নিবন্ধন সনদ বানানো যায়।

নতুন জন্ম নিবন্ধনের জন্য বাচ্চার বয়স যদি ৪৫ থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে থাকে তাহলে তার জন্য ৫০/- টাকা সরকারি ফি দিতে হবে।

নতুন জন্ম নিবন্ধন সনদ 5 থেকে তার উপরে যদি থাকে তাহলে ১০০/- টাকা থেকে ১৫০/- টাকার মধ্যে সরকারি ফি দিয়ে জন্ম নিবন্ধন সনদ বানানো যাবে।

আপনার পুরনো কোন জন্ম নিবন্ধন সনদ যদি ডিজিটালাইজ বা অনলাইনের মাধ্যমে করতে চান তাহলে এর জন্য আপনার ১০০/- টাকা থেকে ২০০/- টাকার মতো খরচ হতে পারে।

আপনার যদি জন্ম নিবন্ধন সনদ হারিয়ে গিয়ে থাকে তাহলে আপনাকে জরিমানাসহ ১০০/- টাকা থেকে ২০০/- টাকার মত সরকারি জরিমানা গুনতে হবে।

বিভিন্ন কারণে আপনার জন্ম নিবন্ধন সনদের যদি কোন ভুল তথ্য থাকে তাহলে সেই ভুল তথ্য সংশোধন করার জন্য ৫০/- টাকা থেকে ১০০/- টাকা সরকারি ফি দিয়ে সংশোধন করতে পারবেন।

জন্ম নিবন্ধন বানাতে কি কি প্রয়োজন?

০ থেকে ৪৫ বছর
১. বাবা মায়ের ভোটার আইডি কার্ড
২.হাসপাতালের সনদ বা ডাক্তারী সনদ

৪৫ দিন থেকে ৫ বছর
১. বাবা মায়ের ভোটার আইডি কার্ড
২. কারেন্ট বিল বা জমির সরকারী ট্যাক্স এর ফটোকপি

৫ থেকে ২১ বছর

১. যেকোনো স্কুল পরীক্ষার সার্টিফিকেটের ফটোকপি
২. নিবন্ধন কারীর পাসপোর্ট সাইজের কয়েক কপি ছবি
৩. বাবা মায়ের ভোটার আইডি কার্ডের ছবি
৪. কারেন্ট বিল বা জমির সরকারী ট্যাক্স এর ফটোকপি
৫. রক্তের গ্রুপ (যদি জানা থাকে)

আপাতত উপরের তথ্যগুলো যেকোনো জন্ম নিবন্ধন কার্ড থাকলে তাহলে খুব সহজেই নিকটস্থ ইউপি কেন্দ্রে গিয়ে জন্ম নিবন্ধন বা জন্ম সনদ তৈরি করতে পারবেন।

শেষ কথা

আমাদের সবারই জন্ম নিবন্ধন সনদের প্রয়োজন রয়েছে। যখন আমাদের আইডি কার্ড তৈরি হয়ে যায় তখন এই জন্ম নিবন্ধন এর প্রয়োজন যদিও কম থাকে।

কিন্তু ০ দিন থেকে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত প্রতিটা দেশের প্রতিটি নাগরিকের একটি জন্ম সনদে হলো সেই দেশের নাগরিক সনদ।
তাদের বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কাজের ক্ষেত্রে এই জন্ম সনদ বা জন্ম নিবন্ধন কে নাগরিক সনদ গণ্য করা হয়।

তো আপনারা যারা জন্ম নিবন্ধন সনদ এখনো বাচ্চার জন্য বানাননি তারা চাইলে আজই আপনার নিকটস্থ কোনো ইউপি কেন্দ্রে গিয়ে জন্ম সনদ বানাতে পারেন

আর যদি ভুল কোন জন্ম নিবন্ধন সনদ বানিয়ে ফেলেন তাহলে অবশ্যই ভুল তথ্য গুলো সংশোধন করতে পারবেন।

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা জন্ম নিবন্ধন সনদ কিভাবে বানাতে হয় সেটা আপনাকে শেখানোর বা জানানোর চেষ্টা করেছি।

সেই সাথে আমরা জানানোর চেষ্টা করছি যে জন্ম নিবন্ধন সনদ কেন প্রয়োজন। অথবা বিভিন্ন কাজে জন্ম নিবন্ধন সনদ কেন দরকার পড়ে।

তো আজকের এই আর্টিকেল থেকে আমাদের কোন বিষয় সম্পর্কে যদি আপনি বুঝতে নাপারেন, তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে আমাদেরকে জানাতে পারেন। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করে আপনার সমস্যাটি সমাধান করে দেয়ার চেষ্টা করব।

আপনার কোন বন্ধুবান্ধব যদি জন্ম নিবন্ধন সনদ তার বাচ্চাদের জন্য বানাতে চায় অথবা জন্ম সনদ সংশোধন করতে চায় তাহলে অবশ্যই তার সাথে আমাদের এই আর্টিকেলটি শেয়ার করতে পারেন। এতে করে আপনার বন্ধু-বান্ধব জানতে পারবে যে তার জন্ম নিবন্ধন সনদ সংশোধন করার জন্য কি কি প্রয়োজন হতে পারে। অথবা নতুন জন্ম নিবন্ধন সনদ বানাতে কি কি দরকার পড়তে পারে। তো দেখা হবে আবার নতুন কোন আর্টিকেলে নতুন কোন বিষয় নিয়ে, ততক্ষণ পর্যন্ত আশা করি সবাই ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন।