পৃথিবীর প্রথম কম্পিউটারের নাম কি? ছবিসহ বিস্তারিত দেখুন

বর্তমান প্রজন্মের কাছে কম্পিউটার যেন তাদের মূল চালিকাশক্তি হয়ে উঠেছে। কেননা কম্পিউটার ছাড়া বর্তমানে কোন কাজেই অনলাইনের মাধ্যমে সম্পাদন করা যায় না। আমাদের মধ্যে কম্পিউটার দিয়ে অনেক কাজ করলেও আমরা অনেকেই জানিনা যে কম্পিউটার কে আবিষ্কার করেছে।

কখনো কি আপনার মনে প্রশ্ন জেগেছে যে কম্পিউটার নামক যন্ত্রটি কোথা থেকে এসেছে! কিভাবে কম্পিউটার নামক যন্ত্রটি আবিষ্কার হয়েছিলো! কেই বা কম্পিউটার নামক যন্ত্রটি প্রথম আবিষ্কার করেছে! যদি আপনার মনে কৌতুহলপূর্ণ প্রশ্নগুলো জেগে থাকে আর কম্পিউটার কে আবিষ্কার করছে যদি আপনি না জেনে থাকেন।

তাহলে এই আজকের আর্টিকেল থেকে আপনি জানতে পারবেন কম্পিউটার প্রথম কে আবিষ্কার করেছে বা কিভাবে কম্পিউটার নামক যন্ত্রটি আবিষ্কার হয়েছে। তো বন্ধুরা আজকের এই আর্টিকেল থেকে চলুন জেনে নিই যে, কম্পিউটার কে আবিষ্কার করেছে?

 

পৃথিবীর প্রথম কম্পিউটারের নাম কি?

কম্পিউটার শব্দের অর্থ হলো গণনাকারী। কিন্তু বর্তমানে কম্পিউটার আবিষ্কারের পর সবাই কম্পিউটার শব্দের অর্থ হলো গণনাকারী যন্ত্র বলে থাকে। সহজ ভাষায় বলতে গেলে যে যন্ত্রের সাহায্যে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত, সংগ্রহ, সম্পাদনা, যোগ, হিসাব নিকাশ সহ ইত্যাদি কাজ করা হয়ে থাকে তাকে মূলত কম্পিউটার বলা হয়। আর এই কম্পিউটার তৈরী হতে অনেক সময় লেগে ছিলো। একটু একটু করে উন্নতি করে আধুনিক কম্পিউটার এর জন্ম হয়েছে।

কম্পিউটার কে আবিষ্কার করেছে এই কথাটির উত্তর আমরা সবাই জানি যে কম্পিউটার আবিষ্কার করেছে চার্লস ব্যাবেজ। এর ধারণা দিয়েছে অগাস্টা ডি সিলভা। মূলত কম্পিউটার শব্দের অর্থ গণনাকারী হওয়ায় কম্পিউটার আবিষ্কার হয়েছিল কবে এটা নিয়ে বিশ্লেষকদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে।

তবে আধুনিক কম্পিউটারের জনক চার্লস ব্যাবেজ কে বলা হয়। চার্লস ব্যাবেজ কম্পিউটার টির নাম দেয় ডিফারেন্স ইন্জিন। পৃথিবীর প্রথম কম্পিউটারের নাম হলো এনালাইটিক্স ইঞ্জিন।

 

যেভাব কম্পিউটার এর আবিষ্কার হয়েছিলো

একজন ফরাসি বিজ্ঞানী ব্লায়াস পাসকেল ১৬৪৫ খ্রিস্টাব্দে এক যান্ত্রিক গণনাকারী যন্ত্র আবিষ্কার করে ফেললেন। তার নামানুসারে এই যন্ত্রের নাম দেওয়া হলো তার পাস্ক্যালাইন। এই পাস্ক্যালাইন যন্ত্রে দাঁত যুক্ত চাকা বা গিয়ার ব্যবহার করে হিসেব-নিকেশ বা গণনা করা হতো।

এরপরে ১৬০৯ সালে বিজ্ঞানী গটফ্রেড উইলহেম ভন লেইবনিজ পাস্ক্যালাইন যন্ত্রটাকে আরও উন্নত করে একটি যন্ত্র আবিষ্কার করলেন আর তিনি সেটার নাম দিলেন স্টেপ রেকোনার। এভাবেই আস্তে আস্তে এগিয়ে চলতে থাকে আধুনিক কম্পিউটার তৈরির কাজ।

তারও পরে ১৮২০ সালের কোন এক সময়ে এই স্টেপ রেকোনার যন্ত্রটাকে আরো একটু উন্নত সংস্কারে প্রকাশ করে বিজ্ঞানী টমাস দা কোমার। কিন্তু হঠাৎ ১৮২১ সালে ইংলিশ গণিতবিদ চার্লস ব্যাবেজ নামের একজন বিজ্ঞানী এমন একটি যন্ত্র আবিষ্কার করলেন যেটা দিয়ে শুধুমাত্র হিসাব নিকাশ করা হয় না আরো অনেক কিছু করা যায়।

ইংরেজি বিজ্ঞানীরা যন্ত্রটির নাম দেয় ডিফারেন্স ইঞ্জিন। এরপরে ডিফারেন্স ইঞ্জিন যন্ত্রটা কে আরো আধুনিক করা হলে এনালাইটিক্স ইঞ্জিন নামে প্রকাশ করা হয়। ইংলিশ বিজ্ঞানী চার্লস ব্যাবেজ কম্পিউটার কে আবিষ্কার করেছিল সেটা দিয়ে সবকিছু স্বয়ংক্রিয়ভাবে গণনা করা যেত। যা বর্তমানে আমাদের কম্পিউটারে করা হয়ে থাকে।

যে কারণে চার্লস ব্যাবেজকে বর্তমানে আধুনিক কম্পিউটারের জনক বলা হয়। আধুনিক কম্পিউটার নামক যন্ত্রটি চার্লস ব্যাবেজ কে আবিষ্কার করেছিল। এরপরে ১৮৯০ সালে তৎকালীন আমেরিকায় আদমশুমারির বিভাগে কাজ করতো ডাক্তার হারম্যান হলোরিথ। এই ডা হারম্যানের এর ঘারে এসে চাপে আদমশুমারির গণনার কাজ।

তখন সরকার প্রায় নিশ্চিত হয়ে বলেছিল যে আদমশুমারি গণনার কাজ ১০ বছরের আগে শেষ হবে না। কিন্তু ডাঃ হারম্যান তাদের এই ধারনা ভেঙে দেন মাত্র ৩ বছরের মধ্যে আদমশুমারীর সব কাজ শেষ করে।

ডাঃ হারম্যান চার্লস ব্যাবেজ এর যন্ত্রের সাথে তার আবিস্কৃত টেবলেটের নাম একটি যন্ত্র যোগ করে। আর টেবলেটর যন্ত্রের সাহায্যে খুব সহজেই যেকোনো কাজ খুব তাড়াতাড়ি করা যায়।

ডাক্তার হারম্যানের এই যন্ত্রনায় অভূতপূর্ব সাফল্য চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। তখন ডাঃ হারমান একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন যার নাম দিল টেবুলেটিং মেশিন কোম্পানি। পরবর্তীতে এই টেবুলেটিংমেশিন কোম্পানি ই আইবিএম নামে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ কম্পিউটার কোম্পানি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

এরপরে পেনসিলভেনিয়া ইউনিভার্সিটির দুজন ইন্জিনিয়ার প্রেসপার একার্ড ও জন মাশলি ১৯৪৩ সালে প্রথম ডিজিটাল কম্পিউটার তৈরি করার কাজ শুরু করে দিল। এরপর কাজ শুরু করার ৩ বছরের মধ্যেই তারা সত্যি সত্যি তৈরি করে ফেললেন প্রথম ইলেকট্রনিক্স কম্পিউটার। প্রেসপার একার্ড ওজন মাসলি এই যন্ত্রটির নাম দেয় এনিয়াক।

এনিয়াক কম্পিউটার এসেছিল প্রায় ৮ মিটার প্রস্থ ১৪ মিটার দৈর্ঘ্য সেইসাথে এর ওজন ছিল প্রায় ১৫ টনের মতো। এনিয়াক কম্পিউটার চালাতে তৎকালীন সময়ে ১৫০ কিলো ওয়াট বিদ্যুৎ এর প্রয়োজন হতো। আধুনিক কম্পিউটারের কাজ দেখাও একটু একটু করে সামনে এগোচ্ছিল।

এরপরে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী হাওয়ার্ড এইকিন ১৯৪৬ সালে এনিয়াক কম্পিউটার থেকে ছোট এবং একটু বেশি ক্ষমতা সম্পন্ন কম্পিউটার আবিষ্কার করে। বিজ্ঞানী হাওয়ার্ড এইকিন তার আবিস্কৃত নাম কম্পিউটারটির নাম রাখে মার্ক ওয়ান।

১৯৪৮ সালে ট্রানজিস্টার আবিষ্কার হলে কম্পিউটার এর আকার ও ছোট হয়ে আসে। সেই সাথে আধুনিক কম্পিউটার এর দৈর্ঘ প্রস্থ ও ওজন ও কমতে থাকলো। তখন হাঙ্গেরীয় গনীতবিদ বিজ্ঞানী জন ভন নিউম্যান ১৯৪৯ সালে এডস্যাক নামের নতুন একটি কম্পিউটার তৈরী করেন।

এরপরে কেটে গেল প্রায় ১০ বছর। ঐ দিকে কম্পিউটার এর সংস্কার দিন দিন বাড়ছেই। যত বারে ততই কম্পিউটার আরো আধুনিক হচ্ছে আরো বেশি তারাতাড়ি কাজ করতে পারে। কম্পিউটার এর সাইজ আরো ছোট হয়ে আসছে। এমন সময়ে ১৯৫৮ সালে সিলিকন চিপ আবিষ্কার হয়। যা কম্পিউটার এর উন্নতি কে আরো হাজার গুন এগিয়ে দেয়।

এরপরে সিলিকন চিপ এর ১৭৭১ সালে অনেকগুলো সার্কিট যোগ করার ফলে মাইক্রোচিপ আবিষ্কার হয়। যা কম্পিউটারের আরো হাজার হাজার গুনে এগিয়ে দেয়। এরপরে আর আমাদের কে পিছে ফিরে তাকাতে হয়নি। কম্পিউটার থেকে আমাদের ল্যাপটপ ডেক্সটপ ইত্যাদি জনপ্রিয় যন্ত্রগুলো তৈরি হয়েছে।

বলা হয়ে থাকে কম্পিউটার তৈরি হয়েছিল প্রায় ৫ থেকে ৫ হাজার বছর আগে। কিন্তু বর্তমান প্রজন্মের কম্পিউটারের জন্ম হতে প্রায় ৪-৫ শতক বছর পার হয়ে এসেছে। এভাবেই আমাদের বর্তমান প্রজন্মের আধুনিক কম্পিউটারের জন্ম হয়েছিল

 

শেষ কথা

কম্পিউটারের সাথে আমরা সবাই কম বেশি পরিচিত আর কম্পিউটার সম্পর্কে জানার আগে আমরা হয়তো অনেকেই জানি না যে কম্পিউটার কিভাবে তৈরি হলো বা কে প্রথম কম্পিউটার তৈরি করল।

কিন্তু এখন হয়তো আপনারা জানতে পেরেছেন যে সর্বপ্রথম কে কম্পিউটার আবিষ্কার করেছিল। যদিও কম্পিউটার শব্দের অর্থ হলো গণনাকারী বাগণনা করা যন্ত্র।

আজকেরে আর্টিকেলে আমরা কম্পিউটার সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য নিয়ে আলোচনা করলাম। আজকের এই আর্টিকেল থেকে আমরা জানতে পারলাম কম্পিউটার কিভাবে তৈরি করা হয়েছিল? সর্বপ্রথম কে কম্পিউটার তৈরি করেছিল? কম্পিউটার আমাদের কি কি কাজে লাগে ও কম্পিউটার সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য সমূহ নিয়ে।

আজকের এই আর্টিকেল থেকে যদি কম্পিউটার সম্পর্কে কোন কিছু বুঝতে অসুবিধা হয় তাহলে অবশ্যই আমাদের কে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করে আপনার সমস্যাটির সমাধান করে দেওয়ার চেষ্টা করব।

আপনার কোন বন্ধু বান্ধব যদি কম্পিউটার সম্পর্কে জেনে না থাকলে কিছু তাহলে তার সাথে আমাদের এই আর্টিকেলটি শেয়ার করতে পারেন। এতে করে আপনার বন্ধু জানতে পারবে সর্বপ্রথম কে কম্পিউটার আবিষ্কার করেছে বা কে সর্বপ্রথম কম্পিউটার তৈরি করেছে।

আজকের মতো এই পর্যন্তই ছিল দেখা হবে আবার নতুন কোন আর্টিকেলে নতুন কোন বিষয় নিয়ে। আর হ্যাঁ আপনি যদি কোন কিছু সম্পর্কে জানতে চান তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাতে পারেন।

আমরা অতি শীঘ্রই আপনার বিষয়টি নিয়ে আমাদের নতুন আর্টিকেল প্রকাশ করব। দেখা হবে নতুন কোন বিষয় নিয়ে তাদের সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।

 

Updated: March 31, 2022 — 7:15 pm