মৌজা কি? – মৌজা কিভাবে বের করবো

হ্যালো বন্ধুরা কেমন আছেন সবাই আশা করি সবাই অনেক ভাল আছেন তো আজকে আমরা জানবো মৌজা সম্পর্কে। অনেক সময়ে বিভিন্ন ধরনের জমি জমার হিসাব নিকাশ করতে গেলে তখন আমাদের এই মৌজা সম্পর্কে জানান প্রয়োজন পড়ে।

কেননা আপনি যদি বিভিন্ন ধরনের জায়গায় সম্পত্তির দলিল নিয়ে খোঁজ খবর রাখেন বা খোঁজখবর রাখতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে মৌজা কি এটা জানতে হবে।

আজকের এই আর্টিকেলের আপনি জানতে পারবেন মৌজা কি এবং মৌজা সম্পর্কে কিছু তথ্য।

এছাড়া আপনারা আরো জানতে পারবেন যেকোনো জায়গা জমির মৌজা কিভাবে বের করতে হয়। কেননা বর্তমান সময়ে এই ডিজিটাল যুগে অনলাইনের মাধ্যমে জমির মৌজা হিসাব বের করা যায়।

আপনার যদি একটি স্মার্টফোন থাকে তাহলে আপনি খুব সহজেই আপনার যেকোনো জায়গা জমিনের মৌজার হিসাব বের করতে পারবে।

অবশ্যই আপনি যদি জায়গা জমিনের মৌজার হিসাব বের করতে চাযন তাহলে আমাদের এই আর্টিকেলটি পুরোটা পড়বেন। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক কিভাবে জমির মৌজা হিসাব বের করা যায় অথবা আপনি কিভাবে জমিনের মৌজার হিসাব বের করবেন।

 

 

মৌজা কী?

 

একটা মৌচাকে কয়েকটা ব্লকে ভাগ করা হয় তোর যে কয়েকটা ব্লক রয়েছে এ ব্লগ গুলোকে বলা হয় সিরিয়াল নাম্বার। আর সংক্ষেপে সিরিয়াল নাম্বার গুলোকে বলা হয় জে এল নাম্বার। একটি জেলাকে অথবা এর কয়েকটি উপজেলাকে বিভিন্ন ব্লকের মাধ্যমে ভাগ করা হলে তাকে মৌজা বলা হয়।

মৌজা সম্পর্কে জানতে হলে আমাদের চলে যেতে হবে সেই মুঘল আমলের সময়ে, যখন রাজস্ব আদায়ের সর্বনিম্ন একক এলাকা কে মৌজা হিসেবে চিহ্নিত করা হতো। কেননা তৎকালীন মোগল আমলে জেলা কে পরগনা বলা হয়ে থাকতো। পরবর্তী সময়ে এই পরগনা জেলার বিভিন্ন রাজস্ব আদায়ে একক হিসাবে মৌজা ব্যবহার করা হতো।

মৌজা মধ্যে অনেকগুলো মৌজা নিয়ে একটি পরগনা জেলা গঠিত হতো যার মাধ্যমে রাজস্ব আদায় করা খুবই সহজ হয়ে যেত। রাজস্ব আদায় ছাড়া আরও বিভিন্ন প্রয়োজনীয় হিসাব রাখার জন্য এই মৌজা নামটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে।

তাছাড়া বিভিন্ন জমিজমা শনাক্তকরণের সবচেয়ে সেরা গ্রহণযোগ্য চিহ্ন ছিল এই মৌজা। মৌজা চিহ্নিতকরণের মাধ্যমে যে কোনো নির্দিষ্ট পরিমাণ ভূমি তে থাকা গ্রামাঞ্চল বসতি স্থাপনের গুলো খুব সহজেই অন্তর্গত করা হতো।

এরপর বিভিন্ন জরিপ হলে সেই সাথে রাজস্ব আদায় করার সময় রাজস্ব কর্মচারীরা মৌজার মাধ্যমে গ্রাম থেকে আলাদা আলাদা ভাবে রাজস্ব আদায় করতো।

সেই থেকেই মূলত এই মৌজা শব্দটির উৎপত্তি। তখন রাজস্ব আদায় করার জন্য বা রাজস্ব নির্ধারণ করার জন্য এক ইউনিট জমির ভৌগলিক জায়গাগুলোকে মৌজা বলে ভাগ করা হতো। একটি মৌজার ভিতর কয়েকটি গ্রাম থাকতে পারে।

 

মৌজা কিভাবে বের করবো?

 

আমরা হয়তো সবাই কমবেশি লাল ফিতার দৌরাত্ম্য নামটা শুনেছি। এখানে সরকারী বিভিন্ন সেবা নিতে হলে মানুষদের বিভিন্ন ভোগান্তি পোহাতে হয়।

আর এইসব ভোগান্তি যেন না হয় সেজন্য বর্তমানে সরকার ডিজিটাল পদ্ধতিতে মৌজা ম্যাপ বের করার জন্য একটি সিস্টেম চালু করেছে। যেখানে অনলাইনের মাধ্যমে খুব সহজেই মৌজা ম্যাপ এর নকশা ঘরে বসেই বের করা যায়।

ঘরে বসেই মৌজা ম্যাপ পেতে চাইলে প্রথমে আমাদের যেতে হবে ই-পর্চা এই ওয়েবসাইটটিতে। ই-পর্চা ওয়েবসাইটে গিয়ে একদম নিচে দেখা যাবে “মৌজা ম্যাপ” নামে একটি অপশন রয়েছে সেটাতে ক্লিক করতে হবে।

মৌজা ম্যাপ এ ক্লিক করার পর আপনারা দেখতে পাবেন আপনার সামনে একটি পেজ চলে আসবে সেখানে লেখা মৌজা ম্যাপ অনলাইন আবেদন। এখন আপনাকে মৌজা ম্যাপ বের করার জন্য আপনার নিজের বিভাগ নির্বাচন করতে হবে।

নিজের বিভাগ নির্বাচন করার পরে আপনাকে আবার নিজের জেলা নির্বাচন করতে হবে। এরপরে আপনাকে নির্বাচন করতে হবে মৌজার জন্য আপনি কোন টাইপের ম্যাপ খুঁজছেন।

 

ম্যাপ টাইপ নির্বাচন করুন:

১. বি এস

২. সি এস

৩. বি আর এস

৪. আর এস

৫. এস এ

৬. পেটি

৭. দিয়ারা

 

এরপরে আপনাকে উপজেলা বা সার্কেল নির্বাচন করতে হবে। আপনার জেলা থেকে যে উপজেলার মধ্যে থেকে আর এস অথবা বি আর এস অথবা এসএ বের করতে চাচ্ছেন উক্ত উপজেলা বা সার্কেল নির্বাচন করবেন।

উপজেলা বা সার্কেল নির্বাচন করার পর নিচে দেখবেন মৌজা নামে একটি অপশন রয়েছে। সেইখান থেকে আপনার নিজের ইউনিয়ন নির্বাচন করবেন। অথবা আপনার মৌজা নং বের করবেন। আপনি যেই নং মৌজার ম্যাপ এর নকশা চাচ্ছেন উক্ত মৌজা নং লিখলে আপনার ইউনিয়ন অথবা মৌজার নকশা চলে আসবে।

মৌজা নির্বাচন করার পর আপনি চাইলে সিট অনুযায়ী সীট নং অথবা দাগ অনুযায়ী দাগ নং লিখে সার্চ করলেই আপনার মৌজার নকশা পেয়ে যাবেন।

এছাড়া আপনি চাইলে যে মালিকের মৌজার ম্যাপ বের করতে চাচ্ছেন তার নামটা লিখবেন। তাছাড়া চাইলে তার বাবার নামটা লিখে সার্চ করলে আপনাদের নির্দ্রিষ্ট অনলাইনের মাধ্যমে মৌজা নকশা পেয়ে যাবেন।

মৌজার নকশা পাওয়ার পরে এখন আপনাকে এটাকে প্রিন্ট করার জন্য আবেদন করতে হবে। আবেদন করার জন্য আপনি একদম সবার নিচে দেখতে পারবেন “আবেদন করুন” নামে একটি অপশন।

আবেদনের ক্লিক করার পর আপনার মৌজার নকশা সব ডিটেলস আপনার সামনে আসবে। তখন আপনাকে খতিয়ান নকল টাইপ নির্বাচন করতে হবে। একটি হল অনলাইন কপি এবং অন্যটি হলো সার্টিফাইড কপি।

তারপরে আপনাকে নিজের তথ্য যাচাই করতে হবে এজন্য আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র নং, জন্ম তারিখ এবং আপনার মোবাইল ফোন নাম্বার দিয়ে যাচাই ক্লিক করুন। যাচাইয়ে ক্লিক করার পর আপনাকে আবারো জাতীয় পরিচয় পত্র নং দিতে হবে।

এরপর আপনার ইমেইল এড্রেস দিবেন তারপর আপনার ঠিকানা দেবেন যেখানে আপনি বসবাস করেন।তারপরে আপনাকে আপনার নাম ইংরেজিতে দিতে হবে এরপর আপনি একটি ক্যাপচা দেখতে পারবেন যেমনঃ ১+৭= অথবা ৪+৫= এগুলো যোগ করবেন।

তারপরে আপনাকে পেমেন্ট মেথড সিলেক্ট করতে হবে। বর্তমানে দুটি পদ্ধতিতে পেমেন্ট করা যায়। একটি হলে eKpay অন্যটি হলো Upay পে সিস্টেম। আপনি যে যার মাধ্যমে পেমেন্ট করবেন সেটা সিলেক্ট করে ওকে দিবেন।

তারপরে আপনাকে একটি একাউন্ট নাম্বার দেওয়া হবে। সেই নাম্বারে আপনি টাকা সেন্ড করবেন। টাকা সেন্ড করার পর যখন আপনার টাকা তারা পাবে তখন আপনাকে মেসেজ এর মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে।

এর কিছুক্ষণ পরে আপনি যদি “অনলাইন কপি” জন্য আবেদন করেন তাহলে “অনলাইন কপি” দেওয়া হবে। আর যদি আপনি “সার্টিফাইড কপি” এর জন্য আবেদন করেন তাহলে আপনাকে একটি পিডিএফ আকারে সার্টিফাইড কপি দেওয়া হবে। সেটা আপনি যে কোনো কম্পিউটারের দোকানে গিয়ে খুব সহজে উত্তোলন করতে পারবেন।

 

 

শেষ কথা

 

তো কেমন লাগলো আমাদের জমির হিসাব বা মৌজার নকশা বের করার জন্য আজকের এই আর্টিকেলটি।

জমির হিসাব বের করার জন্য মৌজা আমাদের অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আমরা যারা বিভিন্ন জমি জমার দলিলপত্র নিয়ে ঘাটাঘাটি করে থাকি তাদের মাঝে মধ্যে এই মৌজা জানার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করা হয়।

আর তখন যদি আপনার কাছে স্মার্টফোন থাকে তাহলে আপনি খুব সহজেই আপনাদের জায়গা জমিনের যে কোন মৌজার সকল তথ্য জানতে পারবেন।

বর্তমানে এই ডিজিটাল যুগে অনলাইনের মাধ্যমে মৌজার হিসাব বের করা যায়। তো আজকের এই আর্টিকেল থেকে আমরা আপনাদের জানানোর বা শেখানোর চেষ্টা করেছি যে কিভাবে অনলাইনের মাধ্যমে মৌজার হিসেব বের করতে হবে।

আশা করি আপনি এখন মোবাইল ফোন দিয়ে খুব সহজেই মৌজার হিসাব বের করতে পারবেন। এরপরও যদি আপনি মোবাইল ফোন দিয়ে মৌজা হিসাব বের করতে না পারেন তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাতে পারেন।আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করে আপনার সমস্যাটি সমাধান করে দেওয়ার চেষ্টা করব।

আর হ্যাঁ আপনার কোন বন্ধুবান্ধব যদি জমির মৌজার হিসাব বের করতে চায় তাহলে তার সাথে আমাদের এই আর্টিকেলটি শেয়ার করতে পারেন। এতে করে আপনার বন্ধু হয়তো খুব সহজে তাদের জমি জমার মৌজা হিসাব বের করতে পারবে।

তো বন্ধুরা আজকের মতো এই পর্যন্তই ছিল দেখা হবে আবার নতুন কোন আর্টিকেলে নতুন কোন বিষয় নিয়ে। ততক্ষণ পর্যন্ত আশা করি সবাই ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন।

 

Updated: April 1, 2022 — 10:13 am