ইউরিন ইনফেকশনের কারণ, লক্ষণ ও ঔষধের নাম ২০২৫

ইউরিন ইনফেকশনের কারণ, লক্ষণ, ঔষধের নাম এবং ইউরিন ইনফেকশন দূর করার উপায় সহ এ সম্পর্কে তো আরো বেশ কিছু বিষয় আপনাদেরকে জানাবো। বর্তমানে অনেকেই ইউরিন ইনফেকশনের সমস্যায় ভুগে থাকেন।

তবে এটা কেন হয় বা এর সমাধান কি তা না জানার কারনে অনেকটা হতাশ হয়ে পড়েন। তো আপনার যদি এরকম সমস্যা থেকে থাকে তাহলে নিচের অংশগুলো পড়ুন তাহলে আশা করছি কিছুটা হলেও উপকারিতা পাবেন।

ইউরিন ইনফেকশনের কারণ

ইউরিন ইনফেকশনের বেশ অনেক কিছু কারণ রয়েছে এটি ছেলে এবং মেয়ে উভয়ের হয়ে থাকে তবে মেয়েদের ক্ষেত্রে এটি সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে। ইউরিন ইনফেকশনের কয়েকটি কারণ গুলো হলো:

১। ইউরিন ইনফরমেশন প্রথম কারণ হলো ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রমণ হওয়া। এই ব্যাকটেরিয়া মূলত পায়ু পথ থেকে মূত্রথলীতে ছড়িয়ে পড়ে এবং আক্রমণ করে।

২। দ্বিতীয় কারণ হলো প্রসাবের চাপ লাগার পরেও অনেকক্ষণ ধরে আটকে রাখা।

৩। পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি না খাওয়া কম পানি খেলে মূত্র ঘন হয় এতে করে সহজেই ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করতে পারে।

৪। অনেকেই বেশিরভাগ সময় অপেক্ষা হয়ে থাকেন এবং গোপন অংশগুলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করেন না সে জন্য সেখান থেকে ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে পড়ে ইউরিন ইনফেকশন হয়ে থাকে।

৫। যৌন মিলনের সময় একে অন্যের থেকে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হতে পারে আর এভাবে অনেকের ইউরিন ইনফেকশনের সমস্যা হয়ে থাকে।

আরো পড়ুন: গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ ও গর্ভবতী মায়ের আমল

এগুলো কারণে মূলত ইউরিন ইনফেকশন হয়ে থাকে এছাড়াও আরো বেশ কিছু কারণ রয়েছে যেগুলোর কারণে ইউরিন ইনফেকশন হতে পারে যেমন গর্ভাবস্থায় হরমোন পরিবর্তনের কারণে এমনটা হয়ে থাকে।

ইউরিন ইনফেকশনের লক্ষণ

ইউরিন ইনফেকশন এর বেশ কিছু লক্ষণ রয়েছে যেগুলো লক্ষণ দেখলে বুঝতে পারবেন যে আপনার ইউরিন ইনফেকশনের সমস্যা হয়েছে লক্ষণগুলো হলো:

  • ঘন ঘন প্রসাবের চাপ লাগবে।
  • প্রসাবের সময় প্রচন্ড পরিমাণ ব্যথা অনুভব করা।
  • প্রসাবের পর প্রচন্ড জ্বালাপোড়া করা।
  • মূত্রের অনেক দুর্গন্ধ এবং ঘোলাটে হওয়া।
  • নিচের পেটে ব্যথা করা।
  • কিডনিতে ইনফেশনের কারণে যদি এমন হয় তাহলে জ্বর হতে পারে।
  • অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায় প্রসাব করার সময় রক্ত বের হয়।

যদি এই লক্ষণ গুলো আপনার মধ্যে অনেক দিন ধরে দেখতে পান তাহলে বুঝতে হবে ইউরিন ইনফেকশন হয়েছে তাই যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে পরীক্ষা করে দেখতে হবে। যদি ইউরিন ইনফেকশন হয়ে থাকে তাহলে চিকিৎসা নিতে হবে।

ইউরিন ইনফেকশন হলে কি সমস্যা হয়

ইউরিন ইনফেকশন হলে অনেক সমস্যা হয়ে থাকে যেমন প্রসাবের অনেক দুর্গন্ধ হয়, প্রসাবের অনেক চাপ লাগে কিন্তু ঠিকমতো প্রসাব হয় না। মহিলাদের ক্ষেত্রে স্রাব বের হওয়া। মূত্র নালীতে প্রচন্ড পরিমাণ ব্যথা অনুভব করা।

এছাড়াও এই সমস্যা অনেক দিন ধরে থাকলে এবং আপনি যদি কোন ধরনের চিকিৎসা গ্রহণ না করেন তাহলে কোমরে ব্যথা হবে, বমি বমি ভাব বা বমি হতে পারে, আর এভাবেই এই সমস্যাটি আস্তে আস্তে কিডনিতে ছড়িয়ে পড়লে কিডনির সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

আরো পড়ুন: থাইরয়েড লক্ষণ কি ? থাইরয়েড কমানোর উপায় জেনে নিন

বাচ্চাদের ক্ষেত্রে খাবারের রুচি কমে যাওয়া, মেজাজ প্রচন্ড পরিমাণ খিটখিটে হয়ে যাওয়া আর এতে করে সব সময় অস্বস্তির মধ্যে থাকা, এবং রাতের বেলা হঠাৎ করে বিছানার মধ্যে ঘন ঘন প্রসাব করে দেওয়া।

ইউরিন ইনফেকশনের ঔষধের নাম – প্রস্রাবে ইনফেকশন হলে কি ঔষধ খেতে হবে

প্রসাবে বা ইউরিন ইনফেকশন হলে অনেকে বিভিন্ন রকম ঔষধ সেবন করতে চান। কিন্তু এটি যেহেতু অনেক সেনসিটিভ একটি বিষয় সে জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ঔষধ সেবন করা প্রয়োজন। তবে আপনাদের জানার জন্য এই এই সমস্যার কিছু সুপারস্কৃত ওষুধের নাম নিচে দেওয়া হলো:

  • Fosfomycin
  • Ceftriaxone
  • Trimethoprim
  • Cefalexin
  • Nitrofurantoin

এগুলো মূলত এন্টিবায়োটিক ঔষধ আর ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের চিকিৎসাই এই ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ করার সাথে সাথে বা সমস্যা দেখা দেওয়ার সাথে সাথে যদি এই ওষুধগুলো সেবন করা যায় তাহলে খুব কম সময়ের মধ্যে সমস্যা ভালো হয়ে যায়। তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করবেন।

ইউরিন ইনফেকশন দূর করার উপায়

যদি বুঝতে পারেন ইউরিন ইনফেকশন হয়েছে তাহলে প্রথমত টেস্ট করানো প্রয়োজন সেজন্য চিকিৎসকের কাছে গিয়ে প্রথমে পরামর্শ নিতে হবে তারপরে টেস্ট করার মাধ্যমে নিশ্চিত হতে হবে এরপর চিকিৎসা নিতে হবে। এছাড়া কিছু ঘরোয়া উপায় মেনে এই সমস্যা দূর করতে পারেন।ইউরিন ইনফেকশন দূর করার উপায়

1. ইউরিন ইনফেকশন যেহেতু ব্যাকটেরিয়া আক্রমণের কারণে হয়ে থাকে তাই এটি দূর করার জন্য বেশি বেশি পানি পান করতে হবে। এবং হাইড্রেট থাকতে হবে ডিহাহাইড্রেশনের কারণে এই সমস্যাটি বেশি হয়ে থাকে।

2. নারিকেলের পানি পান করতে পারেন নারিকেলের পানির মধ্যে রয়েছে ভালো পরিমাণ ইলেকট্রোলাইট যা ইউরিন সমস্যা সহ বিভিন্ন রকম সমস্যার সমাধান করতে ভালো কাজ করে থাকে।

3. হালকা কুসুম গরম পানির মধ্যে একটু লেবুর রস এবং তার সাথে এক চামচ পরিমাণ মধু মিশিয়ে প্রতিদিন সকালবেলা যদি পান করতে পারেন তাহলে এটি ইউরিন ইনফেকশন দূর করবে এবং প্রসাবে জ্বালাপোড়া দূর করবে।

4. টক দইয়ের মধ্যে রয়েছে প্রোবায়োটিক নামক উপাদান এটি বিভিন্ন রকম ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ দূর করতে ভালো কাজ করে থাকে। তাই ইউরিন ইনফেকশন হলে টক দই খেতে হবে। এটি একটি পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার।

5. হালকা পরিমাণ গরম সেক দিতে পারেন এটা ইউরিন ইনফেকশন হলে যে ব্যথা হয়ে থাকে এটা ভালো করতে বেশ কার্যকরী। বাজারে হট ওয়াটার ব্যাগ নেওয়া যায় সেটা নিয়ে তলপেটে গরম সেক দিবেন।

6. যদি প্রচন্ড পরিমাণ ব্যথা এবং জ্বর হয়ে থাকে তাহলে প্রাথমিক অবস্থায় প্যারাসিটামল খাওয়া যেতে পারে এটা ব্যথা এবং জ্বর নিয়ন্ত্রণে আনতে ভালো কাজ করে থাকে।

আরো পড়ুন: পেগনেন্ট টেস্ট কিভাবে করে – যেভাবে প্রেগন্যান্ট টেষ্ট করবেন

এছাড়াও ইউরিন ইনফেকশন দূর করার জন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে, অস্বাস্থ্যকর কোন ধরনের খাবার খাওয়া যাবেনা। আর ঘরোয়া এগুলো উপায় কিছুদিন মেনে চললে ইউরিন ইনফেকশন ভালো হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।

প্রস্রাবে ইনফেকশন হলে কি খেতে হয়

প্রস্রাবে ইনফেকশন হলে অনেক খাবার রয়েছে যেগুলো খাবার খেলে এই সমস্যাটি দূর হয়ে যায়। বিশেষ করে তরল বা পানি জাতীয় খাবার ইউরিন ইনফেকশন দূর করতে ভালো কাজ করে। প্রসাবে ইনফেকশন হলে কি খাবেন জেনে নিন।

  • শসা এর মধ্যে ৯৫% পানি রয়েছে যা শরীর কে হাইড্রেট রাখে।
  • পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে।
  • ডাবের পানি পান করতে পারেন।
  • লেবুর রস ও মধু
  • ক্র্যানবেরি জুস তবে এর মধ্যে চিনি দেওয়া যাবে না
  • টক দই বা এই জাতীয় খাবার
  • তরমুজ
  • বাঙ্গি
  • লাউ
  • টমেটো
  • ভাত, ডাল
  • সিদ্ধ করা শাকসবজি
  • মেথি
  • আপেল সিডার ভিনেগার

প্রসাবে ইনফেকশন হলে এই সকল খাবার খাওয়া উচিত এই সবগুলো খাবার অনেক উপকারী এবং এগুলো খাবারের মধ্যে বেশিরভাগই পানি রয়েছে যা ব্যাকটেরিয়া শরীর থেকে বের করে দিতে ভালো কাজ করে থাকে। অতিরিক্ত তেলের মসলা এবং ঝাল খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।

ইউরিন ইনফেকশন টেস্ট নাম

ইউরিন ইনফেকশন হলে সাধারণত দুইটি টেস্ট করা হয়ে থাকে সেই টেস্ট গুলোর নাম হলো: ইউরিন কালচার টেস্ট (Urine Culture Test) এবং আরেকটি হল ইউরিন রুটিন টেস্ট (Urine Routine Test) আপনাদের ইউরিন ইনফেকশনের সমস্যা হলে এই দুটি টেস্ট করার মাধ্যমে কি সমস্যা হয়েছে বুঝতে পারবেন। এবং সেই অনুযায়ী চিকিৎসা নিলে দ্রুতই ভালো হয়ে যাবে।

আমাদের শেষ কথা

ইউরিন ইনফেকশন হওয়ার পর তাড়াতাড়ি চিকিৎসা নিতে পারেন তাহলে এটা দ্রুত ভালো হয়ে যায়। সবচেয়ে বেশি যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ সেটি হল আমাদেরকে সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে।

পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন না থাকার কারণে মূলত বেশিরভাগ ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করে আর এই সমস্যাটি হয়ে থাকে। আর যদি ইউরিন ইনফেকশন এর লক্ষণ গুলো বুঝতে পারেন তাহলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যাবেন। আজকের মত এখানেই শেষ করছি সবাই ভালো থাকবেন।

Leave a Comment